মহান মে দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে নানা দাবি নিয়ে রাজপথে সরব হয়েছে বিভিন্ন খাতের শ্রমিকরা। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শ্রমিকরা জমায়েত, মানববন্ধন, মিছিল ও র্যালির মাধ্যমে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছেন।
Advertisement
মিছিল, ব্যান্ড পার্টি, বাদ্য-বাজনার সঙ্গে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে তাদের। শ্রমিকদের হাতে লাল-পতাকা গায়ে লাল টি-শার্ট, কারো গায়ের টি-শার্টের রং সাদা। আশপাশের আকাশে-বাতাসে স্লোগান ভাসছে- ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’
জিরো পয়েন্টে পীর ইয়ামেনী মার্কেটের বিপরীত দিকে মানববন্ধনে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনকে দাঁড়াতে দেখা যায়। সেখানে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোট ও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সেখানে বক্তব্য দেন শ্রমিক জোটের সভাপতি আব্দুল কাদের হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হায়াত খান বাদল।
তারা পোশাক শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি শতভাগ নিশ্চিত করা, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস চালু, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ, শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার দাবি জানান।
Advertisement
একই স্থানে নবাবপুর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা দোকান প্রতিষ্ঠান আইন বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়েছেন।
হালকা মোটরযান চালকরা ৯ দফা দাবি তুলেছেন। তাদের দাবির মধ্যে রযেছে- নিয়োগপত্র দেয়া, ন্যূনতম বেতন ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, যখন-তখন চাকরিচ্যুত না করা, সপ্তাহে একদিন ছুটি, দু’টি ঈদে বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেয়া ইত্যাদি।
গুলিস্তান এলাকায় মিছিল করেছে বাংলাদেশ নির্মাণ শ্রমিক লীগ। এই সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হানিফ সরদার নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বার্ধক্য তহবিল গঠন করে পেনশন স্কিম চালুর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচয়পত্র দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
র্যালি করেছে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক। সংগঠনের নেতারা গৃহকর্মীদের জীবনযাপনের উপযোগী মজুরি নির্ধারণ করে প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে তা পরিশোধের ব্যবস্থা, ১৮ বছরের কম হলে গৃহকর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সঙ্গে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। গৃহকর্মীদের ঘুম, বিশ্রাম ও বিনোদনের ব্যবস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ দেয়া; সন্তান সম্ভবা গৃহকর্মীকে প্রসূতিকালীন ছুটি হিসেবে মোট ১৬ সপ্তাহ সবেতনে ছুটি দেয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
Advertisement
গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পশ্চিম পাশে ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ করছিল বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ নামের একটি শ্রমিক সংগঠন। তারা আইনি সুরক্ষা দিয়ে ২০ হাজার টাকা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি করার দাবি জানান।
বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা রমজানের অজুহাতে ছাঁটাই নির্যাতন বন্ধ করে বকেয়া মজুরি, বছরে দু’টি উৎসব বোনাস দেয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে সারা এই খাতের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা ও শ্রম আইন কার্যকরের দাবিও জানান।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ঘিরে আওয়ামী লীগের শ্রমিক সংগঠনগুলোকে সভা-সমাবেশ করতে দেখা গেছে। দলটির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগের জমায়েত হয়, জমায়েত শেষে হয় র্যালি। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরকার দলীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর কর্মীদের বাস-ট্রাকে করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আসতে দেখা গেছে। জিরো পয়েন্টে জিপিও-এর গেটের বিপরীত দিকে হয়েছে জাসদের সমাবেশ।
আরএমএম/এসএইচএস/পিআর