প্রায় তিন মাস ধরে মন্দাভাব বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবাজারে। দফায় দফায় দরপতনে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমছে। এ পরিস্থিতিতে হু হু করে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার দাম বাড়ছে। কোনো কোনো বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার রূপকথার আলাদিনের চেরাগের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম দ্বিগুণ হয়েছে।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ার বিষয়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা হলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার দাম বেড়েই চলেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৪ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ১৪৪ টাকা ৮০ পয়সা। যা টানা বেড়ে ২৮ এপ্রিল (রোববার) লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ২৮৬ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের কম সময়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৪১ টাকা ২০ পয়সা।
অন্যভাবে বললে এক মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ হিসাবে ৪ এপ্রিল যে বিনিয়োগকারীর কাছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের ১০ লাখ টাকার শেয়ার ছিল, তিনি যদি ওই শেয়ার ধরে রাখেন তাহলে সেই শেয়ারের দাম এখন ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা এক মাসের কম সময় বিনিয়োগে লাভ পাওয়া যাচ্ছে ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ যেন আলাদিনের চেরাগই।
Advertisement
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে গত ১৮ এপ্রিল ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করা হয়। ডিএসই জানায়, শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, সাম্প্রতিক শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বাড়ছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই।
১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৬ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ৬৫০টি। প্রতিটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির এ শেয়ারের মধ্যে বর্তমানে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৬৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৩ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার।
শেয়ার দাম হু হু করে তিনশ’ টাকার কাছে চলে আসলেও স্বল্প মূলধনী এ কোম্পানিটির লভ্যাংশের ইতিহাস খুব একটা ভালো না। ২০১৮ সালের স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগের বছর ২০১৭ সালে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। আর ২০১৬ ও ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ দেয়। এর আগে ২০১০ ও ২০০৯ সালে লভ্যাংশ হিসেবে ৫ শতাংশ করে বোনাস দেয় প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের কখনো ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয়নি।
Advertisement
জুলাই-জুন হিসাব বছর নির্ধারণ করা এ কোম্পানিটি চলতি হিসাব বছরে এখন পর্যন্ত ৬ মাসের (২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৬ মাসের হিসাবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ৮০ পয়সা। আগামী ৩০ এপ্রিল কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের (২০১৯ সালের জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প মূলধনী কোম্পানি হওয়ার কারণেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর পেছনে বিশেষ কারসাজি চক্র থাকতে পারে। এ চক্রে বড় বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি কোম্পানির কর্মকর্তাদেরও হাত থাকতে পারে। বিষয়টি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত।
ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, ‘যে কোম্পানিটি কখনোই ১০ শতাংশের উপরে লভ্যাংশ দিতে পারেনি, তার শেয়ার দাম কী করে ২৮৬ টাকা হয়? পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ায় শেয়ার দাম এমন অস্বাভাবিক। শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় কয়েকজন বিনিয়োগকারী মিলে সহজেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বর্তমান শেয়ারবাজারে সেটাই ঘটছে। এ চক্রের সঙ্গে কোম্পানির কেউ জড়িত থাকলেও থাকতে পারেন। বিএসইসির উচিত কেন কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়ছে তা দ্রুত তদন্ত করা।’
এমএএস/এনডিএস/এমএস