ভ্রমণ

গরমে ঘুরে আসুন বান্দরবানের বগা লেক

প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ঘুরে আসুন বগা লেক। লেকটি নিজের চোখে দেখতে চাইলে আপনাকে বান্দরবান জেলায় যেতে হবে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এ জেলাটিতে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য যেন ঢেলে সাজিয়েছে। তাহলে জেনে নিন বগা লেক ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।

Advertisement

বগা লেক: বগাকাইন লেক বা বগা লেক নামে পরিচিত এ প্রাকৃতিক লেকটি বান্দরবানের রুমা উপজেলার অন্তর্গত। সম্ভবত ২০০০ বছর আগে মৃত কোন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা উল্কাপিণ্ড পতনের ফলে লেকটি তৈরি হয়েছিল। যদিও এ লেকের ব্যাপারে অনেক উপকথাও প্রচলিত আছে।

অবস্থান: ‘ড্রাগন লেক’ নামে খ্যাত ১৫ একরের বিশাল জায়গা নিয়ে সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে বগা লেক। লেকের গভীরতা ১২৫ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৪৬ ফুট উপরে থাকা লেকটি আকাশ, সবুজের চাদরে ঢেকে থাকা পাহাড়, নীল জলের অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে আছে।

বৈশিষ্ট্য: নীল জল আর নীল আকাশ মিলে প্রকৃতির অবিশ্বাস্য এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, চারদিকে সবুজের ছোঁয়া। লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়। লেকের সাথে সাথে আশেপাশের নদীর পানিও ঘোলাটে হয়। স্থানীয়দের মতে, বগা লেকের পানি কখনোই কমে না। প্রতি মুহূর্তেই বগা লেক নতুন রূপে ধরা দেয়।

Advertisement

বেস ক্যাম্প: বগা লেক ভ্রমণে যেমন জনপ্রিয়, একইসঙ্গে পর্বতারোহীদের কাছে অনেকটা বেস ক্যাম্পের মতো। কারণ যারা রুমা হয়ে ট্রেকিং রুটগুলোতে যেতে চান, তাদের জন্য বেস ক্যাম্প করতে বগা লেক ভালো অপশন।

আরও পড়ুন : দর্শনার্থীদের ভিড় তাহিরপুর শহীদ সিরাজ লেকে

রুমার দূরত্ব: বান্দরবান শহর থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। রুমা-থানচি বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি দিন ২ ঘণ্টা পরপর ৫টি বাস রুমার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সময় বুঝে টিকেট করে বাসে উঠে পড়ুন। আড়াই ঘণ্টা পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে যেতে পৌঁছে যাবেন রুমা উপজেলায়।

গাইড: রুমা বাজারে নেমে প্রথমে গাইড খুঁজে নিন। স্থানীয় কাউকে বললে পেয়ে যাবেন গাইডের ঠিকানা। প্রতিদিনের জন্য গাইডকে দিতে হবে বিজিবি দ্বারা নির্ধারিত ৬০০ টাকা।

Advertisement

ছাড়পত্র: গাইডকে বলে বিজিবি ফর্ম আর ছাড়পত্রসহ যাবতীয় কিছু রেডি করে রাখুন। দুপুরের খাবারের পর ফর্ম ফিলআপ করে বিজিবি ভ্রমণ খাতায় নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর সবকিছু ঝামেলামুক্ত করে রুমা বাজার যান।

যা রাখবেন: প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র সাথে রাখুন। যেমন- খাবার স্যালাইন, ট্র্যাকিং জুতা, হাল্কা ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার।

চাদের গাড়ি: ট্যুর মেম্বার ৪-৬ জন হলে ফোর হুইলার জিপ ভাড়া নেওয়াই ভালো। খরচ আসা-যাওয়ায় ৪২০০ টাকার মত। মেম্বার বেশি হলে চাদের গাড়ি নেওয়া ভালো। খরচ ৫৩০০ টাকা বা তার কমবেশি হতে পারে।

বগা লেকের দূরত্ব: রুমা বাজার থেকে বগা লেকের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। রুমা বাজার থেকে কমলাবাজার হয়ে প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বগা লেকের পাহাড়ের কাছে চলে আসুন। গাড়ি থেকে নামার পরই ট্র্যাকিং শুরু। পাহাড়ের অন্যপাশেই বগা লেক। পাহাড়ের উপরে উঠলেই চোখে পড়বে বগা লেক। লেকের পাড়ে অবস্থিত বিজিবি ক্যাম্পে পুনরায় নাম-ঠিকানা এন্ট্রি করে বম পাড়ায় চলে যান।

আরও পড়ুন : সিলেট ভ্রমণের আগে যে বিষয়গুলো জেনে নেবেন

থাকা: প্রথম রাতটা বগা লেকে কাটাতে পারেন। থাকার মত কটেজ পাবেন। লেকের কাছেই কটেজগুলো। কটেজের ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। একটি কটেজ বাড়িতে ১২-১৪ জন থাকা যায়।

খাবার: রুমায় পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেলে দুপুরের খাবার রুমা বাজার থেকে সেরে নিন। মাছ-মাংস সবকিছু পাবেন। গাইডকে বলে দিন রাতের খাবারেরও ব্যবস্থা করে ফেলতে। স্থানীয় বমদের বাড়িগুলোর বাইরে টেবিল-চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। সেখান রাতের খাবার খেয়ে নিবেন। ডিম, ডাল, ভর্তা, মুরগির মাংস সবই পাবেন।

বার-বি-কিউ: চাইলে বার-বি-কিউের ব্যবস্থা করতে পারবেন। লেকের পাড়ে বসার জন্যে সুন্দর ব্যবস্থা আছে। সেখানে বসে খুব কাছ থেকে রাতের বগা লেকের সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে বগা লেক যেতে বান্দরবান জেলা শহরে আগে যেতে হবে। ঢাকার গাবতলী, শ্যামলী, কলাবাগানসহ অনেক টার্মিনাল থেকে বান্দরবানের উদ্দেশে গাড়ি ছাড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো ছেড়ে যায়। তবে কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন ট্রেনে গেলে আগে চট্টগ্রাম পৌঁছতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাসে করে বান্দরবান। বাস থেকে নেমে সকালের নাস্তা করে নিতে পারেন। সেখান থেকে ১০ টাকা জনপ্রতি অটোবাইকে রুমা-থানচি চলে যান।

এসইউ/জেআইএম