ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় দাবি করে দেয়া সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
Advertisement
তিনি বলেন, টিআইবির প্রতিবেদনের মাধ্যমে সুশাসনের ঘাটতি চিহ্নিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ওয়াসার এমডি।
সোমবার জাগো নিউজকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক এ কথা বলেন।
গত ১৭ এপ্রিল ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।
আরও পড়ুন>> ঢাকার বাসায় পানি ফোটাতে বছরে পোড়ে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস
এ প্রতিবেদনের জবাব দিতে গত ২০ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ওয়াসার এমডি। সেখানে তিনি টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, টিআইবি যে পদ্ধতিতে গবেষণা করেছে সেটি একপেশে ও উদ্দেশ্যমূলক। এটি পেশাদারি গবেষণা হয়নি।
ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলেও দাবি করেন তাকসিম এ খান।
Advertisement
ওয়াসার এমডির বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছি যে ওয়াসার এমডি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার প্রতিক্রিয়া পেশাদারিত্বসুলভ হয়নি। তিনি আমাদের পেশাদারিত্বে ঘাটতির কথা বলেছেন, তার প্রতিক্রিয়াটাই পেশাদারি প্রতিক্রিয়ায় হয়নি।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের গবেষণা সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত, সামাজিক বিজ্ঞানে গবেষণার যে সর্বোচ্চ স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে, সেটা অনুসরণ করে গবেষণাটা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় গবেষণার শুরুতে গবেষণা পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আরও দুজন পরিচালকের সঙ্গে আমাদের গবেষণা টিমের বিস্তারিত আলোচনা হয়। তারা তাদের অবহিত করেছেন। সেই সময় কিন্তু তাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘পুরো গবেষণা প্রক্রিয়ায় আমরা তাদের সম্পৃক্ত করেছি, তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার বৈঠক হয়। তাদের পরামর্শ ও তথ্য আমরা নিয়েছি।’
‘তাই এটা নিয়ে এখন যদি এভাবে প্রশ্ন তোলেন তবে বলতেই হয়, ওয়াসার সুশাসনের ঘাটতির জায়গাগুলো চিহ্নিত হওয়ার কারণে তিনি (এমডি) ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় বলেছেন এমডি, এটা তো হাস্যকর বিষয়। তিনি নিজেও যে পানিটা সরাসরি পান করতে পারেন না, সেটাকে কীভাবে শতভাগ সুপেয় বললেন? এটা তো একটা প্রশ্নবিদ্ধ স্টেটমেন্ট।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘তিনি যে অবস্থান নিয়েছেন সেটা নিতেই পারেন। কিন্তু আমরা বলছি, আমাদের গবেষণার বিষয়ে আমরা শতভাগ কনফিডেন্ট, আস্থা রয়েছে আমাদের।’
তিনি বলেন, ‘রিপোর্টটি তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে শুনেছি। আমরা এই প্রতিবেদন নিয়ে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। প্রতিবেদনে যে সুপারিশগুলো করেছি, সেগুলো বাস্তবায়নে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত।’
কোনো ল্যাবটেস্ট ছাড়াই টিআইবি ওয়াসার পানির বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে- এমডির এমন অভিযোগের বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমার ল্যাবটেস্টের তো দরকার নেই। ওয়াসার গ্রাহকদের যারা পানি ব্যবহার করছেন তাদের অভিজ্ঞাটাই তুলে ধরার দায়িত্ব হচ্ছে আমার। ওয়াসার পানির গুণাবলি জানা দরকার। পানিতে গন্ধ পাওয়া যায় কি-না, পানির রংটা কতটুকু ভালো- এটা তো যারা পানি ব্যবহার করেন তারাই বলতে পারবেন। আমরা তো তাদের (গ্রাহক) কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমরা তাদের (ওয়াসা) কাছে পাঠিয়েছি। এর সঙ্গে তাদের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছি, সেখানে এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছি। সুপারিশ বাস্তবায়নে সহযোগিতার কথা বলেছি। এটা তো প্রথম পর্যায়ে গেছে। এরপরও তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’
আরএমএম/জেডএ/এমকেএইচ