পবিত্র মাহে রমজানের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এক মাস সিয়াম সাধনার পর যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ-পরবর্তী সময়ে সরকার পতনে ‘কঠোর আন্দোলনের’ প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ ভাসানী) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন >> হতাশ হবেন না, বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যায়নি : ফখরুল
তিনি বলেন, ‘আগামী ঈদের পর আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, বিশেষ করে সরকার পতনের জন্য কঠোর আন্দোলনে যাব। ১০ নম্বর সতর্ক সংকেত দিয়ে সরকারের পতন ঘটাব।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর চলতি মাসের ৮ তারিখে (৮ এপ্রিল) ২০ দলীয় জোট নেতাদের দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন জোটের কর্মসূচি না থাকায় শরিক নেতারা বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ওই বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান তা স্বীকারও করেন।
Advertisement
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, শিগগিরই জোটগতভাবে এবং শরিক দলগুলো নিজ নিজ ব্যানারে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদে কর্মসূচি দেবে।
এ নিয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর বলেন, আলোচনা চলছে, অচিরেই আমরা কর্মসূচি দেব। ২০ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছিল তা উপশম হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ঈদের পর আমরা কর্মসূচি দেব। কর্মসূচি নিয়ে খেলাফত মজলিশের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমেদ আব্দুল কাদের ভিন্ন সুরে কথা বলেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন >> কার্যকর আন্দোলন ছাড়া খালেদার মুক্তি সম্ভব নয় : মোশাররফ
Advertisement
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিএনপি, ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সব জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হলে দেশবাসী তা জানতে পাবেন।
এদিকে জোট সংস্কারের তাগিদ অনুভব করছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মসূচি সবসময়ই চলমান। জোটের কিংবা দলের হোক, সেই কর্মসূচি হবে গঠনমূলক ও গণমুখী। কর্মসূচি নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হবে।
তিনি আরও বলেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কৌশল সাজাতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২০ দলীয় জোট শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক জোটে পরিণত হয়েছে। চিন্তাশীল ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের অভাবে এ জোটের শরিকরা নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অন্য জায়গার সিদ্ধান্ত বা কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চললে জোট রাজনীতি করে সফল পাওয়া কষ্টকর।
‘অতএব, নামমাত্র কর্মসূচি নয়। দাবি আদায়ের কর্মসূচি ঘোষণার আগে জোটের সংস্কার জরুরি।’
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় প্রতি বছরই বিএনপি নেতারা ঈদের পর আন্দোলনের কথা বলে আসছিলেন। তবে ২০১৫ সালে সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর দলের নেতারা ঈদের পর আন্দোলনের কথা তেমন বলেননি।
আরও পড়ুন >> খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপি হঠাৎ সক্রিয় কেন?
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এত দিন চেষ্টা করেছি। দেশের মানুষ এখন আর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখতে চায় না। এবার রমজানের পর সরকার পতনে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দিনক্ষণ নির্ধারণ করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলা না হলেও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এবারই প্রথম এমন কর্মসূচি এলো।
কেএইচ/এমএআর/এমকেএইচ