বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে পহেলা বৈশাখ থেকেই তৃতীয় দফায় রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা।
Advertisement
শুক্রবার এক শ্রমিক জনসভায় নতুন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদ। খুলনা মহানগীর খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে অনুষ্ঠিত ওই শ্রমিক জনসভা থেকে তৃতীয় দফায় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোববার পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল, আগামী ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল টানা ৯৬ ঘণ্টা পাটকল ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। এ ছাড়া আগামী ২৫ এপ্রিল গেটসভা এবং ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার পাটকল ধর্মঘটসহ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ।
শ্রমিক জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন।
Advertisement
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম কামরুজ্জামান চুন্নু।
বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, ৬ এপ্রিল ঢাকায় বিজেএমসির (বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন) কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফা বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় বিকেলে আবারও বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ অন্যদের নিয়ে ছোট পরিসরে বৈঠক করা হয়। কিন্তু সেখানেও দাবি মেনে নেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারেননি। সরকার টাকা দিলে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। কিন্তু কবে নাগাদ ওই টাকা পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত নয়।
শ্রমিক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা সোহরাব হোসেন, ফরাজী নজরুল ইসলাম, শেখ আব্দুল মান্নান, হুমায়ুন কবির খান, শাহানা শারমিন, আব্দুল হামিদ সরদার, জাকির হোসেন, মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, শেখ ইব্রাহিম, বেল্লাল মল্লিক, আলাউদ্দিন, সাইফুল ইসলাম লিটু, সেলিম আকন্দ, দ্বীন মোহাম্মদ, দ্বীন ইসলাম, কাওসার আলী মৃধা, পান্নু মিয়া প্রমুখ।
গত ১ এপ্রিল থেকে রেলপথ ও রাজপথ অবরোধ করে শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে খুলনাসহ পাটকল অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চল। ৯ দফা দাবিতে ধর্মঘট পালনসহ রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা। গত ২ এপ্রিল সকাল থেকে এ অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে টানা ৭২ ঘণ্টার শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়। অবরোধের ফলে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। রেল চলাচলও বন্ধ ছিল। এ সময় শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করেন। শ্রমিকদের আন্দোলনে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ থাকায় মহাসড়কের যাত্রীরা পড়েছিলেন চরম দুর্ভোগে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সরকারি পাটকল শ্রমিকদের সড়ক, রেলপথ অবরোধ, পুলিশ বক্স ও পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, অজ্ঞাতপরিচয় ২০০-২৫০ শ্রমিককে আসামি করে মামলা , ট্রেনে ভাঙচুর ও পাথরের আঘাতে অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫ এপ্রিল সকাল ৬ টায় সরকারি ২৬টি পাটকলের শ্রমিকদের ৭২ ঘন্টার ধর্মঘট শেষ হয়।
Advertisement
আলমগীর হান্নান/জেডএ/এমকেএইচ