সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। নারীর প্রতি রয়েছে শ্রদ্ধাবোধের ঘাটতিও। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে ঘরে-বাইরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদে আগত বক্তারা।
Advertisement
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এই আহ্বান জানান। আলোচনা সভায় বক্তারা ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যাকারীদের ধিক্কার জানান এবং দোষীদের বিচার দাবি করেন।
বক্তারা বলেন, ‘একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিকে এগিয়ে নিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীকে স্বীয় অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিটি কার্যক্রমে নারীর অধিকারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। জাতির আন্দোলন ও সংগ্রামে নারীদের ত্যাগকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তবেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।’
‘বর্তমানে নারীর যে অর্জন, তা এককভাবে আসেনি। সেখানে পুরুষের সহযোগিতা ছিল,’ যোগ করেন এক বক্তা।
Advertisement
আক্তার বানু নামে এক বক্তা বলেন, ‘আজকে আমরা যখন নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করছি, এ রকম একটা সময়ে নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে পারছি না। ঘরে বাইরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করতে হবে। তাহলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’
কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থান তৈরি করতে বেগ পেতে হয় উল্লেখ করে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক দুয়ালাতুন্নাহার খানম বলেন, ‘আমি কারও পরিচয়ে নয়, নিজের যোগ্যতা দিয়ে পরিচালক হয়েছি। এজন্য আমার গর্ববোধ হয়। তবে এই অবস্থান তৈরি করতে একজন নারীকে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়। অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরও নারীরা পারছে।’
নুসরাত প্রসঙ্গে দুয়ালাতুন্নাহার খানম বলেন, ‘নারী হলেও আমি প্রতিবাদ করতে জানি। অন্য নারীরাও জানে। নুসরাত জাহানও প্রতিবাদ করেছে। প্রতিবাদ করায় তার গায়ে আগুন দেয়া হয়েছে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও সে প্রতিবাদ করেছে।’
স্বাধীনতা-উত্তর দেশের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বলেও আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় আরেক বক্তা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবাকে হারিয়েছি। ১৪ বছর বয়সে আমিও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এরপর মানুষের কল্যাণের জন্য শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। এখন অবসরে আছি। জানি না, কতটুকু দেশের জন্য করে যেতে পেরেছি। কিন্তু আমি আজীবন দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।’
Advertisement
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. নাজমা শাহীন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের (নারী ইউনিট) সদস্য সচিব অধ্যাপক নূরজাহান রশীদসহ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শতাধিক নারী ও পুরুষ।
পিডি/এসআর/এমকেএইচ