কিভাবে লিখবো, কী লিখবো জানি না। খালি মনে হচ্ছে, লিখে কী লাভ? প্রতিবাদ করেও বা কী লাভ?
Advertisement
বাংলাদেশের কিছু নরপশু আদৌ কি কখনো বদলাবে? এই দেশের আইন কি কখনো বদলাবে? আর শুধু সেই নরপশু কেন, আমি আরও বেশি স্তব্ধ হয়ে গেছি যে সেই নরপশুর পক্ষে সেই পশুর মত কাজই করেছে কিছু মেয়ে। তাহলে কাকে বলব এই দুঃখের কথা?
আমি নুসরাতের কথা বলছি। হতভাগিনী নুসরাত। সে আসলে একজন অপরাজেয় যোদ্ধা। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছে। নুসরাতের ধর্ষণের খবরটা পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন অপেক্ষা করছিলাম ও হয়তো ফিরে আসবে মৃত্যুর মুখ থেকে। আমাদের অনেকেরই উইসফুল থিঙ্কিং। শতকরা আশিভাগ শরীর পুড়ে গেলে কি আর বেঁচে থাকা সম্ভব?
নুসরাত কে? একজন সাধারণ মেয়ে, মাদ্রাসার ছাত্রী। যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়, যেই ধর্ম মানুষকে ভালো হওয়ার শিক্ষা দেয়। তার অপরাধ কী? সে একজন মেয়ে, তার একটি মেয়ের শরীর আছে, যেই শরীরটা সৃষ্টিকর্তাই তাকে দিয়েছে মানুষের বংশ রক্ষার মহৎ উদ্দেশ্যে, প্রকৃতির নিজ স্বার্থে।
Advertisement
তাকে ধর্ষণ করেছে কে? তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজুদ্দউলা। পিতৃসম শিক্ষক। যে শিক্ষকের হাতে নুসরাতের বাবা, মা তাকে ধর্মীয় শিক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল, জীবন গড়ার মহৎ দায়িত্ব। সেই বিশ্বাসের ফল তারা পেয়েছে। তাদের মেয়েকে পিতৃতুল্য এই নরপশু ধর্ষণ করেছে। এই একটি ঘটনাই কিন্তু মেয়েটি এবং তার পরিবারের জন্য যথেষ্ট ভয়াবহ, আমাদের সমাজের জন্যও অত্যন্ত খারাপ এবং লজ্জাজনক অধ্যায়। মেয়েরা এবং তাদের বাবা, মায়েরা কাদেরকে বিশ্বাস করবে?
স্যালুট জানাই নুসরাত এবং তার পরিবারকে যে তারা ভয়ে বা লজ্জায়, সামাজিক চাপে আর দশটা সাধারণ পরিবারের মত মুখ বুজে থাকে নি, এই অন্যায়কে হজম করে ফেলেনি। তারা মামলা করেছিল ওই শয়তানের বিরুদ্ধে। সাহসী মেয়েটি বোকা ছিল কি? তার বাবা, মা কি ভুলে গিয়েছিল কোন দেশে তাদের বাস?
এই মামলাটা করতে কতখানি সাহসের প্রয়োজন হয় আমরা হয়তো ভাবতেও পারব না। জেনে শুনে যে মেয়ের ভবিষ্যৎ, সংসার, সন্তান, স্বামী সব আশাই হয়তো ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে ওই মামলার সাথে। তারপরেও সাহসী মেয়েটি আর তার পরিবার বিচার চেয়েছিল অন্যায়ের, সব কিছুর বিনিময়ে। কিন্তু ভাবতে পারেনি, যে সেই মূল্য হতে পারে তার নিজের প্রাণ।
আইনের বিচারে ভরসা রেখেই মেয়েটি পরীক্ষা দিতে গেছে ওই মাদ্রাসায়। এর পরের ঘটনা হৃদয় বিদারক। তাকে মিথ্যা কথা বলে চারটি মেয়ে মাদ্রাসার ছাদে নিয়ে তাকে মামলা প্রত্যাহার করতে বলে এবং হুমকি স্বরূপ তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। চারটি মেয়ে, এই মেয়েগুলো একবারও ভাবলো না যে কাল তার সাথেও এই ঘটনা ঘটতে পারে। এই মেয়েগুলো ওই শয়তানের চেয়ে কোন অংশে কম? এদের ছবি কেন দেখছি না কোন পত্রিকায় বা সোশ্যাল মিডিয়াতে?
Advertisement
আগুনে পুড়ে যাওয়া মেয়েটি বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করছিল। ব্যান্ডেজে সারা শরীর মোড়া, ধুঁকে ধুঁকে পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সাথে, সেই সাথে আত্মা কাঁপছে আমাদের মত অনেক অসহায় মানুষের। সেই মুহূর্তেও মেয়েটি বলে গেছে তার যাই হোক সে বিচার চায়।
স্যালুট তোমাকে নুসরাত। তুমি ভুল দেশে, ভুল সময়ে জন্মেছ। নাহলে কিভাবে তোমার মৃত্যুকে মেনে নেয় বাংলাদেশ? কিভাবে তোমার জীবনের বিনিময়েও মানুষের বোধোদয় হয় না?
আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে যখন দেখেছি সেই পশু সিরাজুদ্দউলাকে বাঁচানোর জন্য মানববন্ধন হয়েছে, সেখানেও অগ্রভাগে আছে সেই মাদ্রাসার ছাত্রীরা। ওরা কি মানুষ? ওরা মেয়ে? তোমার জীবন এতোটাই মূল্যহীন? আমি ভাষাহীন, আমার আসলেই কাউকে আর কিছু বলার নেই।
এইচআর/জেআইএম