কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাজি নুরুল কবির চৌধুরীর নাতির নেতৃত্বে চার বন্ধু মিলে ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে। চেয়ারম্যানের পুরনো বাড়িতে গত ২৪ মার্চ রাত ৭টার দিকে ঘটে এ গণধর্ষণের ঘটনা।
Advertisement
গণধর্ষণের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও ১৩ দিনেও কোনো প্রতিকার পায়নি নির্যাতিত শিক্ষার্থী।
ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় মাতব্বররা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছে। সেই সঙ্গে নির্যাতিত ছাত্রীকে হুমকি দিচ্ছে তারা। এ অবস্থায় নির্যাতিত ছাত্রী এবং তার মা বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রী লক্ষ্যারচরস্থ আমজাদিয়া রফিকুল উলুম মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মেয়েটির বাবা নেই। তার মা ব্লাড ক্যানসার আক্রান্ত।
Advertisement
মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পরেরদিন কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মা। অভিযোগটি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন লক্ষ্যারচর ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কায়ছার।
চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কায়ছার বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ঘটনায় জড়িত যুবক ও তাদের স্বজনদের পরিষদে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আসার কথা দিয়েও পরিষদে উপস্থিত হয়নি। তাই মেয়েটির মাকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
তবে স্থানীয়রা জানান, ধর্ষণে জড়িতরা সাবেক চেয়ারম্যানের নাতি ও বর্তমান চেয়ারম্যানের স্বজন। তাই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের রক্ষা করতে লাখ লাখ টাকা খেয়েছেন প্রভাবশালীরা। এরই অংশ হিসেবে সালিশ করার নামে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে ১২ দিন কালক্ষেপণ করেছেন চেয়ারম্যান। পরে গত শুক্রবার থানায় যেতে বলেছেন চেয়ারম্যান।
নির্যাতিত শিক্ষার্থীর মায়ের অভিযোগ, আমার এতিম মেয়েটি মাদরাসায় পড়ছে। ২৪ মার্চ বাড়ির অদূরে আমজাদিয়া এতিম প্রকল্পের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিল মেয়েটি। এ সময় সাবেক চেয়ারম্যান হাজি নুরুল কবির চৌধুরীর নাতি শাকিবের নেতৃত্বে ৪-৫ জন যুবক মেয়েটির মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। মোবাইলটি উদ্ধারে যুবকদের পিছু নেয় মেয়েটি। পরে তারা সাবেক চেয়ারম্যান হাজি নুরুল কবির চৌধুরীর পুরাতন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। মেয়েটি সেখানে পৌঁছলে তুলে নিয়ে চেয়ারম্যান হাজি নুরুল কবির চৌধুরীর বাড়িতে নিয়ে গণধর্ষণ করে শাকিব ও তার বন্ধুরা।
Advertisement
গণধর্ষণের শিকার ছাত্রী জানায়, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাট এলাকার শাকিব, তার সহযোগী মাহিন, নয়ন ও শরীফ আমার ওপর নিপীড়ন চালায়। এ সময় বাইরে পাহারায় ছিল আরও কয়েকজন যুবক। শাকিবই এ ঘটনার নেতৃত্ব দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মো. শিবলী নোমান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমার কাছে এসেছিল কিনা মনে নেই। এমনটি হয়ে থাকলে তারা থানায় অভিযোগ করতে পারে। আমিও খোঁজ নিয়ে দেখব।
চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ঘটনার বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সায়ীদ আলমগীর/এএম/এমকেএইচ