দেশজুড়ে

লোকাল বাসে এলাকায় গেলেন মতিয়া চৌধুরী

তিনবারের সফল কৃষিমন্ত্রী হলেও শেখ হাসিনার বর্তমান মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী। তবে দেশব্যাপী সুনাম-সুখ্যাতির পেছনে যে নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষগুলোর ভালোবাসা লুকায়িত তা ভোলেননি তিনি। একজন সাধারণ মানুষের মতোই যাত্রীবাহী বাসে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গেলেন এবং ঢাকায় ফিরলেন মতিয়া চৌধুরী।

Advertisement

নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন। এ আসনে পঞ্চমবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচিত হওয়ার দুই মাস পর প্রথম এলাকায় গেলেন তিনি।

এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। রোববার তার আসার খবর পেয়েই দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক ভিড় করেন তারগঞ্জ উত্তরবাজারের আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং তৎসংলগ্ন রাস্তায়। রাস্তার দুই পাশের উপচেপড়া ভিড় ঠেলে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করেই দুই মাস পর আসার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, এখানে নিয়ম না মানার নিয়ম চালু হয়েছে।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালে যিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে পাস করতে পারেননি। পাস করেছিল বিএনপির প্রার্থী। এবারও নিয়ম না মেনে নৌকার প্রার্থীকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী থাকায় জয়ী হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। কাজেই যারা নিয়ম না মানার সংস্কৃতি চালু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই।

Advertisement

মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারম্যান যেমন আমার বৈধ সহযোগিতা পেয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যানও পাবে। কাজেই রেষারেষি বন্ধ করে এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখুন।

মতিয়া চৌধুরী ২৯ মার্চ রাতে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাত ১১টায় নিলয় নামে একটি নালিতাবাড়ীগামী বাসে ওঠেন। রাত ৩টার দিকে নকলায় পৌঁছান এবং রাতযাপন করেন। পরদিন দুপুর ১২টায় নকলা চন্দ্রকোনা রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মতিয়া চৌধুরী।

ওই দিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে অনুষ্ঠান শেষ করে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দিনভর মতবিনিময় করেন। রোববার সকাল ১০টায় একটা ভাড়া করা মাইক্রোবাসে নালিতাবাড়ী উপজেলায় এসে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখে নকলা থেকে বেলা ২টায় শেরপুর থেকে ঢাকাগামী বাস সাদিকায় উঠে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হোন।

দলের একজন প্রভাবশালী নেতা, কৃষিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও যাত্রীবাহী বাসে সাধারণ যাত্রীর মতো নির্বাচনী এলাকায় আসায় এলাকার মানুষ মতিয়া চৌধুরীকে দেশপ্রেমিক ও সৎ নেত্রী বলে আখ্যায়িত করেছেন।

Advertisement

ওই দিন মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে একই বাসের সামনের সিটে বসে আসা নাজমুল হাসান স্বর্ণ বলেন, আমার নিজ বাড়ি নকলায় যাওয়ার উদ্দেশে শুক্রবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে একটি নাইট কোচে উঠি। গাড়ির লাইটগুলো নেভানো থাকায় চালকের সহকারী আমাকে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে দেন। আমি অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। এ সময় পরিচিত কণ্ঠে কেউ একজন চালকের কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কার সঙ্গে যেন কথা বলছেন। পরিচিত কণ্ঠ হওয়ায় আমি লোকটিকে খুঁজছিলাম। এমন সময় ওই লোকটি আমার পাশ দিয়ে তার সিটে যাওয়ার সময় অন্য গাড়ির হালকা আলোতে তাকে চিনে ফেললাম, তিনি হলেন- কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর গানম্যান রেজাউল করিম। আমার পরিচিত হওয়ায় তার হাত ধরতেই ইশারায় আমাকে বুঝিয়ে দিলেন আমার পেছনের সিটে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তার একান্ত সহকারী (পিএস) রয়েছেন। আমি তার হাত ছেড়ে দিলাম। পরে আমরা শেরপুর এসে নামি।

মতিয়া চৌধুরীর পাবলিক বাসে আসা-যাওয়ার বিষয়ে নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, মতিয়া আপা মন্ত্রী থাকার সময় বেতন-ভাতার টাকা দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় সেবামূলক কাজ করেছেন। নিজের জন্য কোনো দিন কিছুই জমা রাখেননি। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর বাসে করে কম খরচে তিনি এলাকায় এসেছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতে কোনো রাজনীতিও নেই।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন বলেন, অনেক অনুরোধের পর আপা আমার মাইক্রোবাসে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তবে এজন্য আমার গাড়ির গ্যাস খরচ দিয়েছেন তিনি।

হাকিম বাবুল/এএম/পিআর