প্রবাস

লিসবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন

পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস লিসবন।

Advertisement

দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পর্তুগালে বসবাসরত তাদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা দিবসের দিনের শুরুতে সকাল ১০টায় দূতাবাসে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন আয়োজনে সন্ধ্যায় লিসবনের একটি অভিজাত হোটেলে অভ্যর্থনা ও নৈশ্যভোজের আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস লিসবন।

অনুষ্ঠানে পর্তুগালের সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতারা, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং পর্তুগালে বাংলাদেশ কমিউনিটির ব্যক্তিরাসহ প্রায় দুই শতাধিক অতিথি অংশগ্রহণ করেন।

Advertisement

শুরুতে বাংলাদেশ এবং পর্তুগাল উভয় দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। পরে রাষ্ট্রদূত তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি মহান নেতা ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ নিরীহ বাঙালি ও সম্ভ্রম হারানো ও নির্যাতিতা দুই লক্ষাধিক নারীকে স্মরণ করেন।

গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী-পুরুষ সমতা, শিক্ষা, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন, শিল্প ও অর্থনীতি, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে।’

তিনি বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত এগারো লক্ষাধিক মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে স্থান দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা উল্লেখ করেন। এ চরম মানবিক দূর্যোগ নিরসনে রাখাইন অঙ্গরাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করানোর জন্য পর্তুগালের জনগণ, সরকার ও বিশ্ব জনগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সারা পৃথিবীতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয় উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যে বিরাজমান ঐতিহাসিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং গত ডিসেম্বরে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ, সমুদ্র অর্থনীতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি উল্লেখ করেন।

Advertisement

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের মাঝে সংক্ষিপ্ত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশ এবং বর্তমান সময়ের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার নানা দিক তুলে ধরা হয় প্রামাণ্যচিত্রটিতে।

শেষে পর্তুগালে গবেষণারত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, জনপ্রিয় শিল্পী, নাট্যকার কে এম মোস্তফা আনোয়ার বাংলাদেশের সংগীত সংস্কৃতি তুলে ধরতে বিদেশি আগত অথিতিদের সামনে তানপুরা পরিবেশন করেন। অভ্যর্থনায় অংগ্রহণকারী অতিথিদেরকে বাংলাদেশি ও পর্তুগিজ ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয়।

অংশগ্রহণকারী অতিথীবৃন্দ এমন সুন্দর একটি আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত বলে জানান, অনেকেই বাংলাদেশের এমন বিষ্ময়কর সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এমআরএম/জেআইএম