চালকদের কোনো অবস্থায়ই চুক্তিভিত্তিক গাড়ি দেয়া যাবে না বলে উল্লেখ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বাস মালিকদের উদ্দেশে বলেছেন, চুক্তিভিত্তিক গাড়ি দেয়া বন্ধ করার পাশাপাশি প্রত্যেক বাস স্টপেজে টিকিট কাউন্টার বসিয়ে টিকিট দিয়ে যাত্রী ওঠান। পুলিশ আপনাদের পাশে থাকবে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে ট্রাফিক সচেতনতামূলক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘রঙচটা, ফিটনেসবিহীন ও মডেল আউট কোনো গাড়ি ঢাকা শহরে চলতে দেয়া হবে না। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে জোড়ালো অভিযান চালানো হবে।’
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, ‘দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে রাজপথে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক। সেজন্য আমরা আপনাদের শ্রদ্ধা করি। শুধু আলোচনা করে সমস্যার সমাধান হবে না। সমাধান আসবে আলোচনা বাস্তবায়নের ওপর। মেধাবী ছাত্র আবরারের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা রাস্তায় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমাদের সবার।’
Advertisement
আরও পড়ুন >> ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলে পথচারী আটক : ডিএমপি কমিশনার
তিনি বলেন, ‘এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারেন না। আমরা কেউ চাই না এ রকম দুর্ঘটনা হোক। সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কাজ করলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা দেখতে হতো না। দুর্ঘটনার প্রধান সমস্যা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো। চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানোর ফলে রাস্তায় যানজটসহ সৃষ্টি হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজ পর্যন্ত গাড়ির দরজা বন্ধ রাখতে হবে। রুট পারমিট অনুযায়ী গাড়ি চালাতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে। শ্রমিক ও মালিকবিরোধী কোনো কাজ আমরা করব না। কিন্তু কথা দিতে হবে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করতে হবে।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ গাড়ি চালানো, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানো, রাস্তায় গাড়ি আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশ দেন কমিশনার।
Advertisement
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সড়কের শৃঙ্খলা আনয়নে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান সময়ে আমাদের প্রধান সমস্যা চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো। কাউন্টারে টিকিট দেয়া সিস্টেম চালু হলে চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালানো বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে কমবে সড়কের দুর্ঘটনার চিত্র।’
তিনি বলেন, চালকের লাইসেন্স না থাকলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে অন্যায় ছাড়া ব্যবস্থা নিলে এটা ঠিক হবে না। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে আগামী মাস থেকে কাউন্টারের মাধ্যমে টিকিট কেটে গাড়িতে যাত্রী নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
‘নতুন প্রশিক্ষিত ড্রাইভার তৈরিতে রাজউক ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতিকে পূর্বাচলে জায়গা বরাদ্দ দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা পরিবহন মালিক সমিতি নিজেদের টাকা খরচ করে দক্ষ ড্রাইভার তৈরি করব’- যোগ করেন এনায়েতুল্লাহ।
আরও পড়ুন >> ৭ দিনের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজের পরিকল্পনা, ৩০ দিনে কিছুটা দৃশ্যমান
বাংলাদেশ পরিবহন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা হলে আমরা সবাই একতরফা ড্রাইভারকে দোষী করি। সড়কে চলাচলে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের শিক্ষাজীবনে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে কোনো শিক্ষা দেয়া হয় না। সেজন্য ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শিক্ষা দিতে পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।’
এ সময় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমদসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতিসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/এসআর/জেআইএম