ক্যাম্পাস

ডাকসুতে ছাত্রলীগ সভাপতির ভিপি পদে পরাজয়ের ‘পাঁচ কারণ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রলীগ মনোনীত সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনের পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ডাকসু নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে তারা বিক্ষোভ করছেন।

Advertisement

সুদীর্ঘ ২৮ বছর পর সোমবার (১১ মার্চ) অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নুর ‘জামাত শিবিরি’। ভিপি হিসেবে সে নির্বাচিত না হয়ে অন্য যে কেউ নির্বাচিত হলে তারা মেনে নিতেন। কিন্তু নুরকে ভিপি মেনে নেয়া তাদের জন্য কিছুতেই সম্ভব নয়। গভীর রাতে ফল ঘোষণার পরপরই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার সকাল থেকে সাধারণ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছেন।

ছাত্রলীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ভিপি পদে শোভনের পরাজয়ের কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, পরাজয়ের নেপথ্যে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং-লবিং, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের পিছিয়ে থাকা, গতকাল (সোমবার) ভোট চলাকালে সাতসকালে কুয়েত মৈত্রী হলে ‘জাল ব্যালট পেপার’ উদ্ধার ও ছাত্রলীগ কর্তৃক নুর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে- এমন অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনকে বিষিয়ে তোলা এবং সর্বোপরি মিডিয়ায় নুরকে হাইলাইট করা- এ পাঁচটি বিষয়কে ছাত্রলীগ সভাপতির ভিপি পদে পরাজয়ের প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জানান, বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উত্তরবঙ্গের। নেতৃত্ব হাতছাড়া হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের মানসিক দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। সবাই ছাত্রলীগের জন্য অন্তঃপ্রাণ বলা হলেও ভেতরে ভেতরে আঞ্চলিকতার কারণে গ্রুপিং-লবিংয়ের কারণে নির্বাচনে প্রভাব পড়েছে।

তারা আরও বলেন, অনেকেই বলেছেন গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় স্বাভাবিক কারণেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগবিরোধী একটি বিশাল গ্রুপের সৃষ্টি হয়। এটিও নির্বাচনের ব্যালটে প্রভাব ফেলেছে।

ছাত্রলীগের এক কর্মী জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাতে ঘণ্টাখানেকের জন্যও ঘুমাতে পারিনি। দিন-রাত ছাত্রলীগ মনোনীত প্যানেলকে বিজয়ী করতে পরিশ্রম করেছি। কিন্তু গতকাল (সোমবার) কুয়েত মৈত্রী হলে ‘জাল ভোটের ব্যালট পেপার’ উদ্ধার হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মনে ছাত্রলীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এছাড়া ‘কথিত নির্বাচিত’ ভিপি নুরুল হক নুর গতকাল (সোমবার) ক্যাম্পাসে প্রহৃত হয়েছেন-অমন অপপ্রচারে শিক্ষার্থীদের ‘সিমপ্যাথি’ ভোট তার পক্ষে গেছে।

 আরেক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব ছাত্রলীগ ইচ্ছা করেই নুরুল হক গংদের হাতে তুলে দিয়েছিল। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা নেতৃত্বে না এসে নুরুল হক গংদের সামনে এগিয়ে দিয়েছে। ফলে ওই সুযোগে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে। যার প্রভাব ডাকসু নির্বাচনে পড়েছে। এছাড়া ডাকসুর ভিপি পদ হারানোর পেছনে মিডিয়াও দায়ী বলে মনে করছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। তারা বলেন, ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেয়া এবং তাদের হাইলাইট করে প্রচার করায় প্রভাব পড়েছে।

Advertisement

এমইউ/আরএস/এমকেএইচ