পাক-ভারত উত্তেজনার সময় ইসরায়েলের সহায়তায় পাকিস্তানের ভেতরে ‘ভয়াবহ হামলার’ পরিকল্পনা করেছিল ভারত। তবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঠিক সময়ে এই পরিকল্পনার ব্যাপারে অবগত হওয়ার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যথাযথ জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বার্তা পাঠায়। ফলে বিপজ্জনক পথে পা বাড়ানো থেকে ভারত বিরত থাকে। মঙ্গলবার পাকিস্তান সরকারের উচ্চ-পর্যায়ের সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে ডন।
Advertisement
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে বলছে, ভারতের রাজস্থানের বিমান ঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের ভেতরে অন্তত ছয় থেকে সাতটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেছিল নয়াদিল্লি। তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতের এই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে।
দেশটির সরকারি সূত্র বলছে, পাকিস্তান এই পরিকল্পনার ব্যাপারে ঠিক সময়েই জানতে পারে এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করে দেয় যে, এ ধরনের যেকোনো হামলার যথাযথ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত। পাকিস্তানি গোয়েন্দারা সেই সময় ভারতকে জানায়, ভারত যে হামলা চালাবে তার তিনগুণ বেশি হামলা চালাবে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন : ভারতের অভিযানে মারা গেছে শুধু একটি কাক, দাবি স্থানীয়দের
Advertisement
পাকিস্তানি সরকারি ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বড় বড় শহর বিশেষ করে করাচি এবং বাহাওয়াপুরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিল ভারত। ভারতের সম্ভাব্য এই হামলার ব্যাপারে পাওয়া তথ্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।’
‘সময়োচিত গোয়েন্দা তথ্য ও গোপনীয় বার্তার ফলে ভারতের কাছে এটা পরিষ্কার করা হয়েছিল যে, যদি পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে এর যথাযথ জবাব দেয়া হবে। ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাবে, যেখান থেকে আর পিছু ফেরার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।’ আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ইসলামাবাদ শান্তি চায় বলে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে জানায় পাকিস্তান। শান্তি স্থাপনে পাকিস্তানের ইচ্ছা আছে বলেও জানানো হয়। গত সপ্তাহে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশি এ দুই দেশের মাঝে যখন উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় তখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পাকিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
আরও পড়ুন : প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন ইমরান, পাইলটকে হস্তান্তর
এই উত্তেজনার সময়ে প্রতিবেশি এ দুই দেশের মাঝে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঝে যোগাযোগ ছিল।
Advertisement
পাকিস্তানের ওই সূত্র বলছে, গত কয়েকদিন আগে পাক-ভারত উত্তেজনা যেরকম ছিল এখন সেরকম নেই। তবে দেশটির সরকার, সশস্ত্র বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আটক ভারতীয় পাইলটের মুক্তির পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েকদিনে প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই দেশের মাঝে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন : আমি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য নই : ইমরান খান
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়ি বহরে জঙ্গি হামলায় ৪০ জওয়ানের প্রাণহানিঘটে। পরে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে যুদ্ধবিমান থেকে অভিযান চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই অভিযানের একদিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের আকাশসীমায় পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তান ভারতীয় বিমানবাহিনীর দু’টি বিমান ভূপাতিত এবং একজন পাইলটকে আটকের দাবি জানায়। অন্যদিকে, ভারতও পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি তোলে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জানায়, পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সময় ভারতীয় একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ও অভিনন্দন বর্তমান নামে একজন পাইলট নিখোঁজ রয়েছেন।
অভিনন্দনকে আটকের খবর প্রকাশের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। পরে দেশটির পার্লামেন্টে যৌথ এক অধিবেশনে শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরির লক্ষ্যে আটক পাইলটকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেন ইমরান। এসআইএস/পিআর