উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত মেডিকেল বোর্ড ও জেল কোড অনুযায়ী কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ (সোমবার) ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
Advertisement
সম্প্রতি ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন বিচারক।
আদেশে বিচারক বলেন, খালেদাকে চিকিৎসা দেয়ার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতে মনোনীত হয়েছেন। খালেদা কী অবস্থায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চিকিৎসা পেতে পারেন তাও উচ্চ আদালত কর্তৃক সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক আসামির চিকিৎসা প্রদানের বিষয়টি চলমান রয়েছে, সেহেতু উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাইরে আসামির দরখাস্তের প্রেক্ষিতে বা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করানোর নির্দেশনা প্রদানের কোনো সুযোগ বা এখতিয়ার আদালতের নেই।
আদালত আরও বলেন, এ অবস্থায় খালেদার দাখিলকৃত দরখাস্ত আদালতে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণে আসামি বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত দুইটি আবেদন নথিভুক্ত করা হোক, তবে আসামিকে উচ্চ আদালতের রিট পিটিশন ১১৪৯৬/২০১৮ মামলার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর তারিখের রায়ের নির্দেশ মতে এবং জেল কোড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা বা অব্যাহত রাখার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে।
Advertisement
এর আগে ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘প্রচণ্ড অসুস্থ’ উল্লেখ করে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা আবারও চিকিৎসা করানোর আবেদন করেন তার আইনজীবী।
দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া গত এক বছর ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এর আগে সাতবার তাকে কারা আদালতে হাজির করা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, ৮ নভেম্বর ও ১৪ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৩, ১৩ ও ২১ জানুয়ারি এবং ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠন শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় জব্দকৃত আলামত, সিডি ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কপি চেয়ে একটি আবেদন করেন। ওই দিন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার নিজের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো অপরাধ করিনি। যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিচার হচ্ছে না। আইনি পয়েন্টে মামলার শুনানি শেষ করতে আরও দু’টি তারিখ লাগবে।’
Advertisement
আদালত বলেন, ‘একটি তারিখে শেষ করতে হবে।’ শুনানির জন্য আদালত আজকের দিন (১২ ফেব্রুয়ারি) ধার্য করেন।অপরদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নাইকো দুর্নীতি মামলার জব্দকৃত আলামত, সিডি ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের কপি চেয়ে আবেদন করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।
মামলার পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আসামি হলেন ১১ জন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
জেএ/এআর/এসএইচএস/এমএস