রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় এখনও গ্রেফতার দেখানো হয়নি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও জেএমবির অন্যতম শূরা সদস্য মো. মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজাকে।
Advertisement
গত ১৯ জানুয়ারি গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর রাজধানীর সবুজবাগ থানার একটি মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। তবে হলি আর্টিসান মামলায় তাকে এখনও গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়নি। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার না দেখানোয় হচ্ছে না সাক্ষ্যগ্রহণ।
আজ (মঙ্গলবার) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি রেজাকে এই মামলায় গ্রেফতার না দেখানোয় আজ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আদালত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১২ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।
আদালত আদেশে বলেন, মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মামুনুর রশিদ রিপন ও ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজা কোন মামলায় গ্রেফতার আছে তার কোন প্রতিবেদন আসেনি। প্রতিবেদন এলে তাকে হলি আর্টিসান মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।
Advertisement
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, রেজা অন্য মামলায় রিমান্ডে আছে। তাকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
তবে ট্রাইব্যুনালের পেশকার আতাউর রহমান বলেন, রেজাকে গ্রেফতার দেখানোর জন্য এখনও কোনো আবেদন করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন না করলে আদালত তাকে গ্রেফতার দেখাতে পারে না।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর বলেন, এই মামলায় রেজার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, রেজাকে হলি আর্টিসান মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করবে রাষ্ট্রপক্ষ। তাকে এই মামলায় গ্রেফতার না দেখানোয় সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না।
Advertisement
১৯ জানুয়ারি গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে রেজাকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। ২০ জানুয়ারি তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় সবুজবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম কনক বড়ুয়া পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
২৬ জানুয়ারি পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন রেজা। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তখন তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
গত বছরের ২৩ জুলাই ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। ওই বছরেরই ৮ আগস্ট হলি আর্টিসান মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন নামে দু’জন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ইতোমধ্যে পলাতক দুইজনকেই গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।
এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। এদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিসানেই নিহত হন।
গুলশানের হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন- তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
জেএ/এনএফ/এমএস