বাজারে থাকা প্রচলিত বোতল ও জারের পানি কতটুকু নিরাপদ- তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
পানির মান কেমন? তা জানতে চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিত জারি করা রুল এবং পানি পরীক্ষা করে দেয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানিতে মঙ্গলবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০১৮ সালের ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি’ শিরোনামে প্রতিবেদন যুক্ত করে ২৭ মে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন আইনজীবী শাম্মী আক্তার। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর বাজারে থাকা অবৈধ-অনিরাপদ জার ও বোতলের পানির সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিএসটিআই ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
আদালতের নির্দেশেই বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে গত ২১ জানুয়ারি পাঁচটি ব্র্যান্ডের বোতল ও জারের পানি মানহীন বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল বিএসটিআই। এরপর আজ নির্ধারিত দিনে (২৬ ফেব্রুয়ারি) নতুন করে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
Advertisement
বিএসটিআইয়ের পক্ষে আদালতে আজ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান খোকন। অন্যদিকে রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. জে আর খাঁন রবিন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বোতল ও জারের পানি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ১৫টি কোম্পানির পানি পরীক্ষার প্রতিবেদন পেয়েছি। তখন পাঁচটি ব্র্যান্ডের পানি মানহীন বলে উল্লেখ করছিল বিএসটিআই। সেদিন আদালত অন্যান্য যেসব কোম্পানির পানি পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোরও প্রতিবেদন দিতে বলে। এছাড়াও প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বাজার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআইকে পরীক্ষা অব্যাহত রাখতে বলেছিল।’
সে আদেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার বিএসটিআই প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে- ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের ৬৯টি সার্ভিলেন্স টিম পরিচালনা করে ৩৩ হাজার ৫৭৫টি অবৈধ পানির জার জব্দ এবং ৬৫টি নিয়মতি মামলা করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য বাজার থেকে ২৮টি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২২টির প্রতিবেদনের মধ্যে ১২টি মানসম্মত এবং ১০টি নিম্নমানের। এর মধ্যে ১০টিকে শোকজ নোটিশ দেয়া হয়। তবে ৩টি কোম্পানি জবাব দেয়নি। তাই তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকি ৭টি কোম্পানি শোকজের জবাব দিয়ে মান উন্নয়নের জন্য সময় চেয়েছে। এ কারণে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স না থাকায় ৩৬ কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।’
Advertisement
রিটকারীর আইনজীবী মো. জে আর খাঁন রবিন বলেন, বিএসটিআই আগের প্রতিবেদনে যে পাঁচটি ব্র্যান্ডের পানি মানহীন বলে জানিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে চারটি ব্র্যান্ডের লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়েছে। তবে শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিমিটেডের ‘সিনমিন’র বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই আজকের প্রতিবেদনে।
২১ জানুয়ারির প্রতিবেদনে ‘সিনমিন’র পাশাপাশি ‘ইয়াম্মি,ইয়াম্মি, ‘একুয়া মিনারেল’ ‘সিএফবি’ ও ‘ওসমা’ এর পানি পানের উপযোগী নয় বলে বলা হয়েছিল। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা এখন জানালো বিএসটিআই। আদালতে এই প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করেন আইনজীবী মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম (ফরিদ)।
তখন আদালত বলেন, ‘আপনারা (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) কী কাজ করেন? বিএসটিআই তো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। আপনাদের কোনো কাজ তো চোখে পড়ে না। আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে কোনো হটলাইনও তো নেই। সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করবে কীভাবে? আমি দুইবার ফোন করেও কাউকে পাইনি। এই যদি হয় অবস্থা সাধারণ মানুষ প্রতিকার পাবে কীভাবে?’
তখন আইনজীবী বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট আমরাও পরিচালনা করতে পারি।’
আদালত আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘আপনারা কি সিডিউলভুক্ত (তফসিল)?’
জবাবে আইনজীবী ফরিদ বলেন, ‘সাধারণ যে কেউ চাইলে এ আইনের (নিরাপদ খাদ্য আইন) অধীনে মামলা করতে পারেন।’
তখন আদালত বিশুদ্ধ পানির বিষয়ে তাদের সব কার্যক্রম এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরে আগামী ৫ মার্চ প্রতিবেদন দিতে বলেন।
পরে আইনজীবী ফরিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পক্ষভুক্ত হয়েছে। এরপর আদালত পানি নিয়ে আমাদের কার্যক্রম জানতে চেয়েছে। আগামী মঙ্গলবারের (৫ মার্চ) মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।’
এফএইচ/এমএমজেড/এমবিআর/এমকেএইচ/এমএস