রাজধানীর চকবাজারের চুরিহাট্টায় আগুনের ঘটনায় সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ প্রশাসনকে দোষারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। পুরান ঢাকার দালানকোঠা ও কেমিক্যাল কারখানা সম্পর্কে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায়, এই প্রতিষ্ঠানকেও দোষারোপ করেন তিনি।
Advertisement
রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ : পরিসংখ্যানের ভূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে না পালনের জন্য এ দোষারোপ করেন এইচ টি ইমাম।
কেমিক্যাল কারখানার বিষয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনো কাজ না থাকায় এইচ টি ইমাম বলেন, ‘সম্প্রতি চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। এর সঙ্গেও বোধহয় আপনারা সম্পৃক্ত আছেন। কীভাবে? চকবাজারে এতগুলো দালানকোঠা এবং সেখানে নিষিদ্ধ কতগুলো নানারকম রাসায়নিক পদার্থ আছে। কিছু কিছু অতি দাহ্য, মারাত্মক এবং খুবই ক্ষতিকারক। সরকারের বিভিন্ন সময়ে বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও তারা তাদের নির্দিষ্ট জায়গায় যাননি। সেগুলো কীভাবে ওখানে থাকল? আপনারা কী হিসাব করেছিলেন? বিবিএস কী কখনও ওখানে গেছে? এ হিসাব করা হয়নি।’
কোনো বিষয়ে পরিসংখ্যান বা সুষ্ঠু তথ্য ব্যবস্থাপনা থাকলে সরকারের জন্য ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর এ রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
Advertisement
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখন এগুলোও জানতে হবে। জানতে হবে এ জন্য যে, কোনটি ক্ষতিকর, কোনটি ভালো এবং কার কোথায় থাকা উচিত, কাকে কোথায় স্থানান্তর করা প্রয়োজন, তা জানতে হবে।’
ট্যানারি স্থানান্তর ঠিক হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেমন ধরেন, হাজারিবাগ থেকে অনেক কষ্ট করে আপনারা ট্যানারি স্থানান্তর করলেন সাভারে। আপনারা কী খবর রাখেন, সাভারে যাওয়ার পর তারা কী পরিমাণ পরিবেশ দূষণ করছে? আগে বুড়িগঙ্গা নষ্ট করেছেন, এখন ধলেশ্বরী নষ্ট করা হচ্ছে। এগুলো আমি মনে করি, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। আপনাদের তো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ আছে।’
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘উপজেলা পর্যন্ত আপনাদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা আছে। উপজেলায় আপনাদের দফতর আছে। আপনাদের গাড়ি দেয়া আছে। অর্থাৎ আপনারা বলতে পারবেন না, আমার ক্ষমতা নেই বা চলাফেরার অসুবিধা আছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের নতুন যে ক্ষমতা আছে, সেটা প্রয়োগ করা শিখুন। সরকারকে তথ্য দিন। এ তথ্যগুলো পেলে আমরা তাদের ধরতে পারব।’
কোনো বিষয়ে শুধু পরিসংখ্যান থাকলেই হবে না, সঠিক তথ্য ব্যবস্থাপনাও থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন এ রাজনীতিক।
Advertisement
ফায়ার সার্ভিসের ব্যর্থতা তুলে ধরে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘এখানে ফায়ার ব্রিগেডের দায়িত্ব ছিল, প্রতি বছর গিয়ে প্রতিটি ফ্যাক্টরি, দোকান দেখা উচিত। তারপর ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব ছিল সিটি কর্পোরেশনের। তাদের দায়িত্ব ছিল গিয়ে দেখা, কারা কারা ওখানে আছেন। তারা কী ধরনের ব্যবসা করছেন। সেগুলো ক্ষতিকর, ভালো নাকি মন্দ। এসব ছাড়াও এমনিতেই সেখানে কিছু কেমিক্যাল থাকে, যেগুলো বন্ধ থাকলেও পরিবেশের ক্ষতি করে। এসব থেকে নানা রকম অসুখ-বিসুখ হচ্ছে এখন। সেগুলো তো দেখা দরকার।’
পুলিশও তাদের দায়িত্ব পালন করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ তো সময়মতো দেখেনি। এখন বলা হচ্ছে, প্রভাবশালী মহলের কারণে সেখান থেকে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সরানো যায়নি। তারা কারা? তাদেরকে তো খুঁজে বের করা উচিত ছিল।’
এসব বিষয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য ব্যবস্থাপনা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও উল্লেখ করেন এইচ টি ইমাম।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন নিহত হন।
পিডি/এনডিএস/জেআইএম