নিজের কাজে গুলিস্তান-সংলগ্ন সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন অনিয়মের বিরুদ্ধে ‘ফেসবুক লাইভ’ আন্দোলনখ্যাত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন। চলার পথে সুরিটোলা বিদ্যালয়ের সামনে একটি ময়লার ডাস্টবিন দেখতে পান তিনি। নেমে পড়েন দুর্গন্ধযুক্ত সেই ডাস্টবিনে।
Advertisement
‘স্কুলের বাচ্চাদের বাঁচান, বেঁচে যাবে ভবিষ্যৎ’-এই ক্যাপশনে লিখে রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সুমন। ৩ মিনিটের সেই ফেসবুক লাইভ পোস্টটিতে এই পর্যন্ত ৮৪ হাজার জন লাইক দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কমেন্টস পড়েছে ১০ হাজার। টাইমলাইন থেকে পোস্টটি শেয়ার করেছেন ৪২ হাজার জন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো স্কুলের ঠিক সামনে এভাবে কোনো ডাস্টবিন থাকতে পারে না। তীব্র দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা এখানে কীভাবে থাকবে? শিক্ষার্থীদের এমন দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে আমি ডাস্টবিনে নেমে লাইভে এসেছিলাম। যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এসে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।’
ব্যারিস্টার সুমনে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিনে নেমে বাচ্চাদের বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘আমি যেখানে দাঁড়াইয়া আছি সেইটা একটা ময়লার ডাস্টবিন। সুরিটোলা বিদ্যালয়ের মেইন গেইটে যেখানে প্রায় ১৫শ’ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে, সেখানে এমন দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন থাকতে পারে না। ঠিক ওভারব্রিজের নিচে স্কুলের সামনে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন কীভাবে থাকে?’
Advertisement
ফেসবুক লাইভের একপর্যায়ে তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ডেকে বলেন, ‘তোমাদের এখানে দুর্গন্ধ লাগে না? তোমরা চাওনা এখান থেকে এই ডাস্টবিন অপসারণ হোক?’ তখন শিক্ষার্থীরাও চিৎকার করে তার কথায় সম্মতি জানায়।
সিটি কর্পোরেশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন বলেন, ‘এসব শিক্ষার্থী বাচ্চারাই একদিন শিক্ষামন্ত্রী, মেয়র হবে। এই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধের যন্ত্রণা থেকে এসব শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিন। কোনো স্কুলের ঠিক সামনে এমন ডাস্টবিন থাকতে পারে না।’
স্কুলের ঠিক সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিন কেন? এটি অপসারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কী না-এ বিষয় জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বরত অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জের সায়েদুল হক সুমন ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করার পর ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চলে যান। সেখানে সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ‘বার-অ্যাট-ল’ করেন। সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। আইনজীবী হলেও সুমন পরিচিতমুখ হয়ে উঠেছেন অনিয়মের বিরুদ্ধে তার ‘ফেসবুক লাইভ আন্দোলন’র মাধ্যমে।
Advertisement
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় সুমন দেখেন নরসিংদীর শিবপুরে রাস্তার প্রায় মাঝখানে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের একটি খুঁটি। এ বিষয়ে ফেসবুক লাইভ করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেটি অপসারণ করে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এ ধরনের খুঁটি সরাতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের নির্দেশ জারি করে।
বাবুবাজার ব্রিজটির ওপর বাতি জ্বলত না, সেজন্য অন্ধকারেই চলাচল করতে হতো যানবাহন এবং লোকজনকে। তাতে সেখানে ছিনতাইয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটতে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সুমন বিষয়টি ফেসবুক লাইভে তুলে ধরলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্রিজটিতে বাতি জ্বলে ওঠে।
রাজধানীর কাঁটাবন মোড়ে বালু ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে ফুটপাত দখল করে জনচলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণেও ফেসবুক লাইভে প্রচার করলে দ্রুতই অপসারণ করা হয়। এসব ঘটনার মাধ্যমে সামাজিক নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে এসে সম্প্রতি আলোচনায় আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।
এএস/এসআর/এমকেএইচ