দেশজুড়ে

ঠাকুরগাঁওয়ে বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত শুরু

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করাকে কেন্দ্র করে বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহতসহ ১৬ জন আহতের সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কাজ শুরু করেছে।

Advertisement

এর আগে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন।

তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন। পাশাপাশি নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রতিটি নিহতের পরিবারকে দেয়া হয়।

শনিবার বিকেল ৫টার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুর কুতুবুল আলম। তদন্ত কমিটির অন্য ছয় জন সদস্য হলেন- পীরগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঠাকুরগাঁও সেক্টর সদর দফতর বিজিবির সহকারী পরিচালক, ঠাকুরগাঁও পাবলিক প্রসিকিউটর, হরিপুর থানার ওসি ও স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

Advertisement

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও ১৫ জন আহতের ঘটনায় শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তকাজ শুরু হলো। ঘটনাস্থলের চারপাশ পরিদর্শন করেছে তদন্ত কমিটি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এক এক করে গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের পরিবারের মধ্যে যারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তাদের সাক্ষ্য প্রথমে এবং এলাকার লোকজন যারা ঘটনা দেখেছেন তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। ঘটনাস্থলে সাক্ষ্য প্রদানে আগ্রহীদেরকে তালিকায় নাম লেখানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি।

তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে পরিদর্শনের সময় তদন্ত কমিটির সদস্য হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমজে আরিফ বেগ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুল আলম, হরিপুর থানার ওসি আমিরুজ্জামানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথম দিনে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ঘটনাস্থলে আটজন সাক্ষ্য প্রদানে রাজি হন এবং তারা সাক্ষ্য দেন। যা কাগজে লিপিবদ্ধ করা হয়। এছাড়া যারা গোপনে সাক্ষ্য প্রদানে ইচ্ছুক তাদের সাক্ষ্য গোপনে নেয়া হবে বলে জানানো হয়।

Advertisement

এর আগে শনিবার বেলা ১১টার সময় বিজিবির প্রায় ১৫০ জন সদস্য মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে এসে হরিপুরের বহরমপুর গ্রামের হবিবর রহমান ও জসিমকে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তাদের কে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের পর আবার পুনরায় গ্রামে দিয়ে যায় বিজিবির সদস্যরা।

হবিবর রহমান বলেন, দুপুরে হটাৎ বিজিবি এলাকায় প্রবেশ করে আমাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ক্যাম্পে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা শেষে আমাকে আবার পুনরায় গ্রামে দিয়ে যায় বিজিবির সদস্যরা।

ঘটনার পর পুনরায় বিজিবির সদস্য মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করে টহল দেয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছে এলাকার লোকজন। তাদের দাবি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হতে দেয়ার জন্য বিজিবির সদস্য দলবেঁধে এসে এলাকার লোকজনকে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রামে দিয়ে যাচ্ছেন। বিজিবির লোকজন যেন ওই গ্রামে না প্রবেশ করে এবং এলাকার লোকজনকে বিনা কারণে ক্যাম্পে ধরে না নিয়ে যায় এজন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

১২ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বহরমপুর গ্রামে গরু জব্দ করাকে কেন্দ্র করে বিজিবি সদস্য এবং গ্রামবাসীর সংঘর্ষে স্কুলছাত্র, শিক্ষকসহ তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হন।

গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় বিজিবি বাদী হয়ে নিহতরাসহ প্রায় ২৫০ জনের বেশি গ্রামবাসীকে আসামি করে হরিপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।

রবিউল এহসান রিপন/এএম/এমকেএইচ