প্রবাসে কর্মী হিসেবে বৈধ হলেও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সুবিধাপ্রাপ্তি অধরা ছিল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের। তাদের কল্যাণ বোর্ডের সদস্যভুক্তির দাবি ছিল প্রবাসীদের। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে সরকার গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে বৈধকর্মীদের কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হবার সুযোগ দেয়।
Advertisement
ঘটাকরে গেল বছরের ২৫ মার্চ দূতাবাসে সদস্য অন্তর্ভুক্তির উদ্বোধন করেন তৎকালীণ প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি। সে'দিন চারজন সরাসরি মন্ত্রীর হাতে আবেদন তুলে দেন। এরপরই যেন হারিয়ে গেছে সবার আগ্রহ। দূতাবাস প্রচারণাও করেছে বেশ এখনও প্রচারণা অব্যাহত আছে।
কিন্তু ঘাটতি যেন কোথাও থেকেই গেছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া থেকে সদস্যভুক্তির হার তুলনামূলক কম কেন? কারণ হিসেবে জানা গেছে অনেকেই জানে না কিভাবে কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে হয়।
হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গত বছর উদ্বোধনের পর থেকে লিফলেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালিয়েছেন। জানা গেছে, সদস্যভুক্তির কার্যক্রম জোরদার করার জন্য একটি নির্দিষ্ট টার্গেট ঠিক করেছে দূতাবাস। যা অর্জন করার জন্য সচেষ্ট।
Advertisement
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’-এর সদস্যপদ পেতে ওয়েবসাইট www.wewb.gov.bd এ গিয়ে ফরম পূরণ করে, ১৯০ রিংগিত ব্যাংক ড্রাফটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা করতে হয়। কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে ২ কপি ছবি, (পাসপোর্ট সাইজের), ভিসা কপি, আবেদন জমা দেয়ার পর প্রয়োজনীয় যাচাই ও প্রক্রিয়া শেষে দূতাবাস ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডকে জানিয়ে দেয়। এরপর কল্যাণ বোর্ড সদস্য সনদ প্রদান করে।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করে। প্রচারপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সদস্যপদ গ্রহণকারী প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের জন্য প্রতিবছর বোর্ড থেকে শিক্ষাবৃত্তি পাবে, প্রবাসীদের সন্তানদের বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসী কোটায় ভর্তির সুযোগ।
এ ছাড়া প্রবাসে মৃত্যু হলে মরদেহ দেশে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান, মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় বিমানবন্দরে লাশ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য, প্রবাসে মৃত্যু হলে মৃতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা, পুনর্বাসন লোনসহ আরো নানা কল্যাণমূলক সুযোগ-সুবিধা পাবে।
তবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বৈধ হলেও কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হতে তেমন সাড়া না পাওয়ার পেছনে অনলাইনে ফরম পূরণ করাকে অধিকাংশই জটিল ও ঝামেলা মনে করে। নানা ধরনের তথ্য, কোম্পানির তথ্য ইত্যাদি প্রদানে রয়েছে সংকোচ ও দ্বিধা। এসব কাটিয়ে ওঠার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল এ প্রতিবেদককে জানান, অনলাইনে ফরম পূরণকে জটিল মনে করলে দূতাবাসে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দূতাবাস সব সহযোগিতা প্রদান করছে।
Advertisement
তিনি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে প্রবাসীদের পাশে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসার জন্য কমিউনিটিকে অনুরোধ করেছেন। প্রবাসী কর্মীদের ও পরিবারের সুরক্ষা ও মানসম্পন্ন সেবা দেয়া, তাদের আস্থা অর্জন, মৃতদের দেশে আনা, ব্যয় নির্বাহ এবং এ সংক্রান্ত কাজে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার গত বছরের ৯ জুলাই ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিল ২০১৮’ আইন পাশ করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখা প্রবাসীকর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান কল্পে এ ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড’ গঠিত হয়।
আইনে আরো রয়েছে, বিদেশে কর্মরত অভিবাসী কর্মী নির্যাতনের শিকার, দুর্ঘটনায় আহত, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধার ও দেশে আনা, আইনগত ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়া, ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্দেশে দেশে-বিদেশে হেল্প ডেস্ক ও সেফ হোম পরিচালনা করবে বোর্ড। মালয়েশিয়া প্রবাসী কমিউনিটি নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ বাদল বলেন, ‘প্রবাসীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকার যে আন্তরিক, তা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য কার্যক্রম অন্যতম উদ্যোগ। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের এ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচার করা হলে দূতাবাসে গিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার আবেদন আরো বাড়বে।’
এমআরএম/এমএস