সাংবাদিকদের অনৈক্যের কারণে সাগর-রুনি হত্যার বিচার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে মেঘের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিলেও বিচারহীনতা স্পষ্ট। আজ মা-বাবা হত্যার বিচারের ব্যাপারে মেঘ কথা বলতে চায় না। কারণ সাত বছর ধরে সে দেখে এসেছে রাষ্ট্রীয় বিচারহীনতা।
Advertisement
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে একথা বলেন সাংবাদিক নেতারা।
ডিআরইউ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণ সাগর-রুনি হত্যা। অনেক কথা, অনেক ব্যথা নিয়ে আমরা চলছি। গত সাত বছর ধরে শুধু তদন্তই চলছে। এই দিনটি স্মরণসভায় পরিণত হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামও করেছি লাভ হয়নি। গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন তাও ভাবনার বিষয়।
তিনি বলেন, ৭০ বছর আন্দোলন করা প্রয়োজন হলেও বিচার নিশ্চিত করা হবে, বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে যুগপথ আন্দোলন। এজন্য দরকার সাংবাদিকদের ঐক্য। অনৈক্যের কারণেই আমরা সাংবাদিক হত্যার বিচার পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাবাদীরা হয়তো বুঝিয়েছে, নইলে এত দিনে সাগর-রুনি হত্যা বিচার হতো।
Advertisement
ইলিয়াস হোসেন বলেন, রুনির ভাই নওশের রোমান, সাগর-রুনির ছেলে মেঘ সমাবেশে উপস্থিত কিন্তু তারা কথা বলবে না, বলতেও চায় না। কথা বলেই বা কি লাভ? সাত বছরে তো বিচারের ছিটেফোঁটাও টের পাওয়া যায়নি।
সংগঠনের সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, সাগর-রুনিকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু কারা, কেন হত্যা করলো তাদের স্বরূপ দেখতে পাব- তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামে এমনটাই বিশ্বাস করেছিলাম। এরপর কত দিন, কত বছর গেলো, বিচার পেলাম না। খুনীরা আজও ধরা পড়লো না। স্পিকার আশ্বাস দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু বিচার পাইনি। তবে দেখেছি ৬৩ বার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানোর খবর।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, সরকারের দায়িত্ব বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তারা।
আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, সরকার পারে না এমন কিছু নেই। সাগর-রুনি হত্যার বিচারে সরকার দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এই ব্যর্থতা দেখতে চাই না।
Advertisement
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা সাংবাদিকরা কেন তাদের বাধ্য করতে পারছি না? আমাদের শপথ নিতে হবে, সাগর-রুনির রক্তের বদলা আমাদের নিতে হবে। আর সেটা করতে হলে দলীয় লেজুরবৃত্তি, বিভাজন বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। রিপোর্টার্স ইউনিটি কর্মসূচি দিলে আমরা পাশে থাকব।
ডিআরইউয়ের সিনিয়র সদস্য মশিউর রহমান বলেন, অনেক যন্ত্রণা এই মাইক্রোফোন ধরা। আজ পর্যন্ত সবাই সাংবাদিক সমাজের সাথে চিটিংবাজি করেছেন। অনশন করেছি, রাস্তায় নেমেছি, স্বরাষ্টমন্ত্রীর দরজায় আঘাত করেছি। বিচার না হবার দায় প্রধানমন্ত্রীর।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাংবাদিকদেরই ভাঙতে হবে। আমরা আর মানবো না। যারা তদন্ত করছেন তাদেরকে চাপ দিতে হবে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ বহুমুখী সমবায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ মতলু মল্লিক, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সহ-সভাপতি মিজান মালিক, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম, ডিআরইউর সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক শেখ মাহমুদ এ রিয়াত, নির্বাহী সদস্য রাশেদুল হক, সিনিয়র সদস্য জান্নাতুল ফেরদৌস মানু সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূর ইসলাম হাসিব, দফতর সম্পাদক জেয়াদ হোসেন চৌধুরী, দিপ্ত টিভির সিনিয়র রিপোর্টার বায়েজিদ আহমেদ, সারাবাংলার সিনিয়র রিপোর্টার গোলাম সামদানি প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে ডিআরইউসহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
জেইউ/এমএমজেড/আরআইপি