শুক্রবার ও শনিবারে দর্শনার্থী টানতে বেলা ১১টায় শুরু হয় বইমেলা। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই বইমেলায় ছিল দর্শনার্থীদের ভিড়। তবে সরেজমিনে বইমেলায় দর্শনার্থী বেশি দেখা গেলেও বইয়ের ক্রেতা কম দেখা গেছে।
Advertisement
বইয়ের বিক্রেতারা বলছেন, আজ থেকে শেষ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। কাল থেকে বইমেলায় আগ্রহ বাড়বে মানুষের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমবে বইমেলাও।
শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ ঘুরে দেখা যায়, গত শুক্রবার ও শনিবারের চেয়ে দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দর্শনার্থী বেশি লক্ষ্য করা গেলেও স্টলের সামনে ক্রেতা বা দর্শনার্থীদের বই কেনার আগ্রহ কম। বই দর-দাম করছেন, নিজের পছন্দের বই খুঁজছেন, কম সংখ্যক দর্শনার্থীই কিনছেন বই।
পাঠক সমাবেশের বিক্রয়কর্মী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আশা করছি এই সপ্তাহেই জমবে বইমেলা।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মেলার শেষ দিন আজ। কাল থেকে রাজধানীতে আগ্রহের জায়গা হবে বইমেলা।’
Advertisement
বিদ্যা প্রকাশনের এক বিক্রেতা বলছেন, ‘দর্শনার্থী থেকেই অনুমান করা ঠিক হবে না খুব বই বিক্রি হচ্ছে। স্টলে ক্রেতারা আসছে না তা নয়, মানুষ আসছে, ক্যাটালগ দেখছে, তবে বই তেমন কিনছে না।’ কয়েকদিনের মধ্যেই ক্রেতা বেড়ে যাবে বলে আশা এই বিক্রেতার।
অবসর প্রকাশনীর আলাউদ্দিন বলছেন, ‘আমাদের এখানে হুমায়ূনের কাটতি আছে। এখানে আমাদের হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলি অমনিবাস-১, ২, ৩, আত্মজৈবনিক রচনাসমগ্র, মেঘ বলেছে যাব যাব, দেবী, নিশীথিনী, পেন্সিলে আঁকা পরী এবং মুহম্মদ জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন সমগ্র বেশ বিক্রি হচ্ছে। এসব বই সবসময়ই বিক্রি হয়।’ মেলা জমলে নতুন লেখকদের বইয়ের কাটতি বাড়বে আশা আলাউদ্দিনের।
অনন্যা প্রকাশনীর স্টলের সামনে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আজ সত্যি বলতে বন্ধুরা মিলে ঘুরতেই এখানে আসা। তবুও বই একটা কিনেছি। মেলায় এসে মনে হলো অনেকেই ঘুরতেই এসেছেন। আবার শুক্রবার-শনিবারে মেলাপ্রাঙ্গণে বাচ্চাদের সঙ্গে অভিভাবকদের ভিড় থাকে বেশি। আজও তাই মনে হলো।’
বাবা রতন পালের সঙ্গে মেলায় এসেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র অভ্র। অভ্র জানায়, ‘দুটো বই কিনেছি; একটি ভূতের অন্যটি কমিক নভেল। গতবার আম্মুর সঙ্গে এবার আব্বুর সঙ্গে এসেছি। মেলায় আসতে ভালো লাগে।’
Advertisement
রতন পাল বলেন, ‘মেলায় আমরা আসি বইয়ের প্রতি সন্তানদের আগ্রহ বাড়াতে। বইমেলা কেন, কীভাবে এলো বাংলা ভাষা; এসব ওরা এখানে আসতে আসতে বুঝে যাবে। সঙ্গে বিনোদন পেল, বইও পেল। আমার তো মনে হয়, প্রত্যেক অভিভাবকেরই সন্তানদের বাঙালির এই প্রাণের মেলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া উচিত।’
মেলায় নতুন বইবাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের দেয়া তথ্য অনুসারে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে এক হাজার ৯৫টি। এর মধ্যে ২৬৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
গল্প ১৬৪টি, উপন্যাস ১৮৩টি, প্রবন্ধ ৬৬টি, কবিতা ২৯৭টি, গবেষণা ১৮টি, ছড়া ৩১টি, শিশু সাহিত্য ৩৬টি, জীবনী ৩৪টি, রচনাবলি ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ৩৬টি, নাটক ৯টি, বিজ্ঞান ৪টি, ভ্রমণ ২৮টি, ইতিহাস ২১টি, রাজনীতি ৯টি, চিকিৎসাস্বাস্থ্য ৮টি, কম্পিউটার ৩টি, রম্য ১০টি, ধর্মীয় ৭টি, অনুবাদ ৪টি, অভিধান ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১৮টি ও অন্যান্য ৮৬টি।
বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের সহকারী গ্রন্থাগারিক জিসান বলেন, শনিবার সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
শনিবার বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বই ‘স্মৃতিময় তপ্ত মিতালী’ ও ‘যান্ত্রিক জীবন স্বাপ্নিল খড়কুটো’ বইয়ের লেখক নাজমুছ সাদাৎ নোমান জাগো নিউজকে বলেন, এখানে আসা দর্শনার্থী-ক্রেতাদের জন্যই প্রতিবছর এই ঐতিহ্যের মেলা বসে। আমরা বই লিখি তো পাঠকদের জন্যই। এখানে আসা প্রত্যেক দর্শনার্থী যদি একটি করেও বই কেনেন তবে বইমেলা স্বার্থক, স্বার্থক হবে আমাদের লিখনিও।
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বইমেলা চলবে মাসব্যাপী। গত শুক্রবার বিকেলে মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
জেইউ/বিএ/জেআইএম