বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে সুপারিশ করা হলেও বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত প্রার্থীদের যোগদান করতে দিচ্ছে না।
Advertisement
সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এনটিআরসিএতে গিয়ে শত শত ভুক্তযোগীকে অভিযোগ নিয়ে ধরনা ধরতে দেখা গেছে। কাউকে আবার সংস্থাটির অভিযোগ কেন্দ্রে অভিযোগ দাখিল করতে দেখা গেছে। কেউ আবার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের কাছে সরাসরি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এসব অভিযোগের স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি মেধাক্রম অনুযায়ী ১৫ হাজার ১৫৭টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯ হাজার ৩১৭ শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এর দুদিন পর থেকে যোগদান কার্যক্রম শুরু করা হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে প্রার্থীদের যোগদান করতে দেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর যোগদান করতে চাইলে কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রার্থীদের কাছে অর্থ দাবি করছেন। কোথাও আবার শূন্যপদ না থাকায় যোগদান করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান থেকে চাহিদা দেয়া হয়নি বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে।
Advertisement
তবে যেসব বিষয়ে যোগদানের সুপারিশ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ের অনুমোদন দিলে তাদের নিয়োগ দিতে দেয়া হবে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে।
আবার কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি না হলেও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত হিসেবে শূন্যপদের চাহিদা দিয়েছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিতরা যোগ দিতে গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখে ফিরে আসছেন। পরিস্থিতি উল্লেখ করে তারা এনটিআরসিএতে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন।
তথ্যমতে, এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রি লেভেলের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য অনলাইনে চাহিদা চাওয়া হয়। এতে গত ২৬ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৫ হাজার ১৮৬টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদের চাহিদা পাওয়া যায়।
এ পদগুলোতে নিয়োগের জন্য নিবন্ধন সনদধারীদের কাছ থেকে গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদের বিপরীতে ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৬টি আবেদন পাওয়া যায়।
Advertisement
পরবর্তীতে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভুল চাহিদা দিয়েছে বলে এনটিআরসিএকে লিখিতভাবে জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৩২টি প্রতিষ্ঠানের ভুল চাহিদাজনিত কারণে ২১৮টি পদে নিয়োগের সুপারিশ আপাতত স্থগিত রাখা হয়। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে পারবেন।
এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা জানান, তালিকা প্রকাশের দু’দিন পর থেকে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। এর দু’দিন পর থেকেই প্রার্থীরা বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ নিয়ে এনটিআরসিএতে আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জমা দিয়ে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সহস্রাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
চট্টগ্রামের গহিরা কলেজে কৃষি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করলেও কলেজে এ বিষয় না থাকায় যোগদান করতে দেয়া হয়নি চার প্রার্থীকে। তাই বাধ্য হয়ে তারা সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন।
ভুক্তভোগীরা জাগো নিউজকে বলেন, গহিরা কলেজে আমাদের চারজানকে কৃষি বিষয়ে ‘প্রভাষক’ পদে যোগদানের জন্য সুপারিশ করা হলেও সে কলেজের অধ্যক্ষ তাদের জানিয়েছেন, কৃষি বিষয়ে এখনও তারা অনুমোদন পাননি। এনটিআসসিএতেও তারা চাহিদা দেননি। তাই এখানে যোগদান করার কোনো সুযোগ নেই বলে তাদের বিদায় দেয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, অধ্যক্ষের কাছ থেকে আমরা লিখিত এনে এনটিআরসিএতে জমা দিতে এসেছি। প্রতিষ্ঠানের ভুলের জন্য তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
চট্টগ্রামে লোহাগড়া উপজেলার সফি ফতেয়ালী ওয়াসী মহিলা মাদরাসায় নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও যোগদান করতে গিয়ে দেখেন এ প্রতিষ্ঠানটি এখনও এমপিওভুক্তি হয়নি। তাই সেখানে যোগদান না করে তিনি এসেছেন অভিযোগ নিয়ে। তাদের মতো এমন শত শত ভুক্তভোগী নানাভাবে হয়রানি হয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন এনটিআরসিএতে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এমপিওভুক্তি নীতিমালায় বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, এনটিআরসিএতে শিক্ষক-কর্মচারীর চাহিদা দিলে, ওই পদে এ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্বাচিত বা মনোনীত প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে। প্যাটার্ন অতিরিক্ত চাহিদা দিলে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগকারী ব্যক্তিকে শতভাগ বেতন-ভাতা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রদান করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন-ভাতা স্থগিত বা বাতিল করা হবে। পাশাপাশি পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজন কমিটি ভেঙে দিতে পারবে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। সে সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যোগদান করতে দেয়া না হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোতে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো তালিকা প্রণয়ন করিনি। প্রতিষ্ঠানের দেয়া তালিকার ওপর ভিত্তি করে মেধাক্রম অনুযায়ী নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছি। তাই তালিকা দেয়নি বা কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এমএইচএম/এনডিএস/এমএস