বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। সোমবার অভিযান শুরুর পর থেকেই জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও উচ্ছেদ অভিযানের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিভিন্ন স্থান থেকে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘কোনো প্রভাবশালীর কাছে আমরা মাথা নত করব না। অলরেডি বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে হুমকি-ধামকি এসেছে। আমার উচ্ছেদকারী ম্যাজিস্ট্রেট যারা; তাদেরও হুমকি দিয়েছে। কিন্তু হুমকিতে আমরা বিচলিত নই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান দেখতে এসে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে আরএস দাগ অনুযায়ী ২ হাজার ১১২টি স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ছাড়া বাকিগুলো আমরা হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী উচ্ছেদ শুরু করেছি।’
Advertisement
এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় সদরঘাট থানার পাঁচ নম্বর জেটি এলাকা থেকে কর্ণফুলী নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেন জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত ও তৌহিদুর রহমান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গা ভূমি সহকারী কমিশনার তাহমিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাক্তাই থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত কর্ণফুলীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানকে তিন জোনে ভাগ করা হয়েছে। মোট ২ হাজার ১৮৭টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। প্রথম ধাপে আজ থেকে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত দুইশ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এর পুরোটা উচ্ছেদ করা গেলে প্রায় ১০ একর জায়গা উদ্ধার করা যাবে। যতক্ষণ না উদ্ধার কাজ শেষ হচ্ছে ততক্ষিণ প্রতিদিনই কাজ চলবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অপর দুটি জোনে উচ্ছেদ অভিযান চলবে।’
অভিযানের বিষয়ে তিনি জানান, কর্ণফুলী বাঁচানোর অভিযানের অংশ নিচ্ছে চট্টগ্রামের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। অভিযানে লোকবল ও যন্ত্রাংশ দিয়ে সহায়তা করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তারা এ অভিযানে একটি বুলডুজার, দুটি ট্রাক ও একটি স্কেবেটর দিয়ে সহায়তা করছে। এ ছাড়া অভিযানে অংশ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, বিটিসিএল, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্টিবিউশন লিমিটেড, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও জানান, যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কর্ণফুলী বাঁচানোর অভিযানে অংশ নিচ্ছে পুলিশের দেড়শ সদস্য, র্যাব-৭ এর ১০০ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের ২০ জনের একটি দল। সহায়তা করছে নৌ পুলিশের সদস্যরাও।
Advertisement
২০১০ সালে কর্ণফুলী নদীর গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে নদীর সীমানা নির্ধারণ, দখল, ভরাট ও নদীতে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস ও পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জনস্বার্থে এ রিট করেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই কর্ণফুলী নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও ভূমি জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ লক্ষ্যে গঠিত ১৬ সদস্যের কমিটি ২০১৬ সালের ১৮ জুন আরএস ও বিএস রেকর্ড অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থান ও দখলদারদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করে। এরপর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট কর্ণফুলী নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা সরাতে ৯০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। গত তিন বছরে স্থাপনা আরও বেড়েছে। এরমধ্যে ছয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কন্টেইনার ডিপো স্থাপন করে কর্ণফুলী দখল করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের তালিকায় জনপ্রতিনিধি, শিল্পপতি, বড় ব্যবসায়ীদের নামও রয়েছে।
এনডিএস/আরআইপি