‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি স্বাধীন সংস্থা। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়নের ধারা স্থায়ী হবে, না হলে দেশ পাকিস্তান হতে বেশি সময় লাগবে না। আমাদের ভিক্ষা করতে বসতে হবে।’
Advertisement
রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুদকের ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে থাকার অভিযোগ নিয়ে দুদকের ব্যাখ্যা দাখিলের সময় হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেছেন।
এ সময় আদালত প্রশ্ন তোলে আরও বলেন, একজন ব্যক্তি অপরাধী না হওয়া সত্ত্বেও দুই বছরের বেশি সময় জেল খাটতে হলো কেন?
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে ভুক্তভোগী জাহালমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত।
Advertisement
শুনানির সময় আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা, মামলার বাদী জাহিদ, স্বরাষ্ট্র সুরক্ষা বিভাগে যুগ্ম সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ভুক্তভোগী জাহালমের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা (প্রসিকিউশন) ভুল করেছে বলে জানান। দুদকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সোনালী ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তথ্য পাওয়ার পর আমরা আবু সালেকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করি। এরপর ২০১২ সালের ১০ এপ্রিল আব্দুল্লাহ্ আল জাহিদ মামলার অনুসন্ধান করেন। এরপর চার্জশিট জাহালমের নাম ওঠে আসে। টাঙ্গাইলের স্থানীয় চেয়ারম্যানরা জাহালমকে শনাক্ত করেন।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এ মামলায় যাকে আসামি করা উচিৎ ছিল তাকে আসামি না করে সাক্ষী বানালেন। জজ মিয়া নাটক আরেকটি বানালেন নাকি? দুদক একটি স্বাধীন সংস্থা। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়নের ধারা স্থায়ী হবে, না হলে দেশ পাকিস্তান হতে বেশি সময় লাগবে না, আমাদের ভিক্ষা করার জন্য বসতে হবে।
আদালত আরও বলেন, আমরা দুদকের কাজে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করুক এটা আমরাও চাই। আপনাদের (দুদক) আগেও ব্যাংকের দুর্নীতি মামলায় সাবধান করেছি। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। অথচ অনেক মামলায় দেখেছি আপনারা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের আগেই তাকে একটি নোটিশ দিয়ে দেন। অথচ পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই নেই। তাহলে কেন নোটিশ দিচ্ছেন? প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় একজন অপরাধী না হওয়া সত্ত্বেও জেল খাটতে হলো কেন? দুদককে স্বচ্ছ হতে হবে।
Advertisement
এরপর আদালত তার আদেশে জাহালমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ২৬ মামলায় অব্যাহতি প্রদান করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৬ মার্চ পরবর্তী দিন ঠিক করেন।
অমিত দাস গুপ্ত বলেন, জাহালমকে ২৬ মামলায় অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আরও ৭ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল না করায় আদেশ দেননি আদালত। ফলে তার মুক্তিতে আর বাধা থাকছে না।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম