শিকারের আশায় বনের মধ্যে ওৎপেতে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। গাছের ডালে ঝুলে আছে বানর। নানা রকমের হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে বনের মধ্যে। ফণা তুলে আছে সাপ। বনের মাঝ দিয়ে একেবেকে চলছে নদী। সেই নদীর তীরে আছে ভয়ঙ্কর কুমির।
Advertisement
সৌন্দর্যের লীলাভূমি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের আদলে তৈরি এমনই একখণ্ড সুন্দরবন কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। মেলার মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি এবার আর দেখা যাচ্ছে না।
গত কয়েক বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যে স্থানটিতে একখণ্ড সুন্দরবন বসানো হতো সেখানে এখন রয়েছে কয়েকটি চারাগাছ। তার মধ্যে আছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বানর, সাপ, কুমির, হরিণের কোনো নিদর্শন সেখানে আর নেই।
অথচ মেলার যে বিষয়গুলো দর্শনার্থীদের সব থেকে বেশি বিনোদন দিতো তার মধ্যে শীর্ষে ছিল কৃত্রিম এই সুন্দরবন। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়া দর্শনার্থীদের একটি অংশ এই সুন্দরবনের পাশে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিতেন এবং ছবি ও সেলফিতে মেতে উঠতেন।
Advertisement
মিরপুর থেকে বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে আসা মো. কামরুল হোসেন নামের একজন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে যতগুলো বাণিজ্য মেলা হয়েছে প্রত্যেকটিতেই আমি একাধিক দিন ঘুরতে এসেছি। মেলার মধ্যে যে সুন্দরবন ছিল তা সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। কিন্তু এবার আর তা দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, গত বছর যে সুন্দরবন ছিল সেখানে একটি গাছের ডালে একহাত ধরে ঝুলে ছিল বানর। তার থেকে অল্প দূরে হাঁ করে বসে ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীতে ছিল পানির ধারা। এর পাশেই চড়ে বেড়াচ্ছিল চিত্রা ও মায়া হরিণ। তার পাশেই ছিল কুমির। এ যেন সত্যিকারের এক সুন্দরবন।
যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা মো. ইকবাল বলেন, গত বছর মেলায় যে কৃত্রিম সুন্দরবন বানানো হয়েছিল তা খুবই সুন্দর ছিল। বাচ্চা ছোট থাকার কারণে গত বছর পরিবার নিয়ে মেলায় আসতে পারেনি। এবার মেলার সুন্দরবনের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সে সুযোগ হচ্ছে না। এবার যে সুন্দরবনটাই নেই।
তিনি বলেন, সুন্দরবন আমাদের গর্বের। বাণিজ্য মেলায় একখণ্ড যে সুন্দরবন রাখা হতো তা মেলার সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতো। আবার যারা সত্যিকার সুন্দরবন ঘুরে দেখে আসতে পারেনি, তারাও মেলায় এসে সুন্দরবন সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেতো। আমি মনেকরি মেলার ভেতর একখণ্ড সুন্দরবন তুলে ধরার প্রচেষ্টা প্রতিবছরই অব্যাহত থাকা উচিত।
Advertisement
সুন্দরবন না থাকার বিষয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উপসচিব ও মেলার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রফ জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমরা মেলার ভেতরে অনেক মানুষের বসে বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আগে যে সুন্দরবন ছিল সেটা পুরোটা ঘেরা থাকতো, ফলে মানুষ তার ভেতরে প্রবেশ করতে পারতো না। মেলার দর্শনার্থীরা যাতে বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায় এ জন্য এবার আমরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের জায়গা রেখেছি।
তিনি বলেন, আমরা সচিব মহোদয়ের নির্দেশে এবার মেলায় বেশ কয়েকটি বিশ্রাম কেন্দ্র তৈরি করেছি। আর আগে যেখানে সুন্দরবন ছিল, সেখানে গাছ লাগানো হয়েছে। তার ভেতরে প্রবেশ করে মেলার দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নিতে পারবেন। দর্শনার্থীদের বিশ্রাম নেয়ার পর্যন্ত সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এবার সুন্দরবন রাখা হয়নি।
এমএএস/বিএ/এমএস