সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। কেনাকাটার জন্য যেন এ দিনটিকেই বেছে নিয়েছে নগরের কর্মজীবীরা। তাই বিকেল গড়াতেই ঢল নেমেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। রাজধানীর শেরে-ই-বাংলা নগরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা গেছে, যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
Advertisement
মেলায় স্টলে স্টলে বিক্রেতাদের মুখে হাসি। বিক্রিও হচ্ছে অন্যদিনের তুলনায় বেশি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলা অভিমুখে যানবাহনের দীর্ঘজট। বিজয় সরণী মোড়, মানিক মিয়া এভিনিউ ও আগারগাঁও মোড় থেকে দীর্ঘ যানবাহনের সারি। সামনে কলেজ গেট এলাকাতেও একই পরিস্থিতি। যানজট কমাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের সড়কে গণপরিবহন থেকে নেমে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা হেঁটে বাণিজ্য মেলার দিকে যেতে দেখা যায়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামনের সড়ক যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। পাঁচ মিনিটের সড়ক পেরুতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতা সাধারণের।
Advertisement
সড়কেই বাণিজ্য মেলায় প্রবেশের টিকেট কাটা সম্পন্ন হলেও প্রধান ফটকের সামনে দীর্ঘ লাইন। টিকিট চেকারদের কারণে আরও বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
আমিন বাজার এলাকা থেকে মা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন এসিআই গ্রুপের কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ছাড়া উপায় নেই। শুক্রবার ভিড় হয় জানতাম। কিন্তু এত ভিড় হবে বুঝতে পারিনি। মেলায় ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে আর যাই হোক মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় বেশি হলেও তুলনামূলকভাবে কম। তাই কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পেরেছি নির্বিঘ্নেই।’
আরএফএল শো রুমের সামনে কথা হয় কনিকা রানীর সঙ্গে। মোহাম্মদপুরের এ নারী ক্রেতা বলেন, ‘আরএফএল এর বেশ কিছু পণ্য কেনার ছিল। কিনেছি বেশ কিছু। কিন্তু সব নিয়ে যেতে পারছি না। নিয়ে যাওয়ার কষ্টের কারণে হোম ডেলিভারির সিস্টেমের বেশ কিছু অর্ডারও দিতে হলো।’
Advertisement
ড্রেস লাইন ফেব্রিক্সের ম্যানেজার রফিকুল্লাহ দিপু বলেন, ‘আজ ছুটির দিন হওয়ায় উপচে পড়া ভিড় শো-রুমে। আমরাও সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ডিসকাউন্টে থ্রি-পিস টু-পিসসহ মেয়েদের হরেক রকম পোশাক বিক্রি করছি।’ গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে এমনিতেই বেশি ভিড় থাকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়কে। আর আজ শুক্রবার হওয়ায় মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় খুব বেশি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আমাদের ট্রাফিক সদস্যদের সর্বোচ্চ চেষ্টায় মেলাকে কেন্দ্র করে বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবারের বাণিজ্য মেলা ৮ দিন পিছিয়ে গত ৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। মেলা শুরুর পর ১১ জানুয়ারি শুক্রবারও ছিল এমন উপচে পড়া ভিড়। মাসব্যাপী এ মেলা শেষ হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি।
মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এবার প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশ টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলা প্রাঙ্গণ ছাড়াও অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছে এবারের মেলার টিকিট।
মেলায় এবার প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল রয়েছে ৪১২টি।
বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের মোট ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হলো- থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।
জেইউ/এনডিএস/এমকেএইচ