দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তলবে গত ৩০ জানুয়ারি জবানবন্দি দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ।
Advertisement
কয়েক ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে দুদক কর্মকর্তারা ঘুরেফিরে বলেন, আপনি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিদেশি কোটায় (সার্ক ও নন-সার্ক) শিক্ষার্থী ভর্তি বাণিজ্যে জড়িত। দুর্নীতিবাজ কর্মচারী আবজাল হোসেনের মাধ্যমে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন। গত দুই বছর আগে ওই শাখা থেকে অন্যত্র বদলি হলেও আবজাল নিয়মিত ওই অফিসে যাতায়াত করতো। সারাদেশের মেডিকেল কলেজে ঠিকাদারি কাজ সে একাই করতো। শীর্ষ কর্মকর্তা অর্থাৎ পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টরের ক্ষমতাবলে আপনি তাকে সহযোগিতা করতেন।
তবে অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার অবৈধ অর্থ নেই। পরিচালক হিসেবে বেতন-ভাতার পাশাপাশি প্রাইভেট প্রাকটিসও করেন। যা রোজগার করেন তার নিয়মিত ট্যাক্সও পরিশোধ করেন। দুদকের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রায় প্রতিবারই স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হতো। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পেতেন বলে জানান। এছাড়া সরকারি ৩০টি মেডিকেল কলেজে সার্ক ও নন-সার্ক কোটায় বিদেশি মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক নয়-ছয়ে অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুদক জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সুকৌশলে জাল সার্টিফিকেট ও মার্কশিট জমা দিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করে ভুয়াদের ভর্তির সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রতি ভর্তিতে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়া হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ভারতের কাশ্মীরের ১৫ শিক্ষার্থী জাল সার্টিফিকেটে ভর্তির ঘটনারও উল্লেখ করা হয়।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবজালের মতো আরও অনেকেই রয়েছেন। অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে মূলত তারাই জাল সার্টিফিকেটকে আসল বলে সত্যায়িত করেন। বর্তমানে চিকিৎসা শিক্ষা শাখায় ‘র’ আদ্যক্ষরের একজন আবজালের মতো ব্যাপক নয়-ছয় করে থাকেন। তার সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু হয়েছে।
Advertisement
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ বলেন, ‘দুদকের তলবে ৩০ জানুয়ারি হাজির হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। ভর্তি পরীক্ষা ও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বাণিজ্যে জড়িত বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে মোটেও আমি জড়িত নই। অবৈধ অর্থ উপার্জনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এমইউ/এএইচ/এমকেএইচ