গত ৪৫ বছরে ভারতে বেকারত্বের সর্বোচ্চ হার লক্ষ্য করা গেছে। ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের এক সমীক্ষায় এই তথ্য সামনে এসেছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার হাতে পৌঁছেছে দেশের কর্মসংস্থানের তথ্য এবং পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সমীক্ষার রিপোর্ট।
Advertisement
সেখানেই দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ সালে দেশে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ। এই রিপোর্ট প্রকাশ না করা নিয়েই গত কয়েক দিন ধরে চলছিল বিতর্ক। অনুমতি থাকা সত্ত্বেও এই রিপোর্ট প্রকাশ না করায় বুধবারই ইস্তফা দেন ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন (এনএসসি) বা জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানসহ দুই সদস্য।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই রিপোর্ট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে আমাদের হাতেই। কখন প্রকাশ করা হবে, সেই সিদ্ধান্তও আমরাই নেব।
এই রিপোর্টে দেখা গেছে, দেশে বেকারত্বের হার এখন আক্ষরিক অর্থেই আকাশচুম্বী। গ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার অনেকটাই বেশি। ভারতবর্ষের গ্রামে বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, সেখানে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে। সামগ্রিক ভাবে সারা দেশে বেকারত্বের হার গত ছয় বছরে ২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশে। অন্য দিকে সারা দেশের যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে।
Advertisement
২০১৬ সালে মোদি সরকার নোটবন্দি ঘোষণা করার পর এটিই প্রথম সরকারি সমীক্ষা। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে, বিরোধীরা লাগাতার এই অভিযোগ তুললেও সেই সংক্রান্ত কোনও সরকারি রিপোর্ট এতদিন সামনে আসেনি। এই রিপোর্ট প্রকাশ নিয়েও বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে টালবাহানা।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই রিপোর্ট চেপে রাখার অভিযোগ তুলে ইতোমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল কমিশন-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান পি সি মোহনন। তার অভিযোগ ছিল, ‘ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস’ বা এনএসএসও-র ২০১৭-১৮ সালের রিপোর্ট খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর ডিসেম্বর মাসেই প্রকাশ করার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছিল এনএসসি। কিন্তু তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
মোহননের সঙ্গেই ইস্তফা দেন এনএসসির আরও এক সদস্য জে ভি মীনাক্ষী। তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিসের প্রাক্তন সদস্য এবং দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্স-এর অধ্যাপক। ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও তার আগেই তারা ইস্তফা দিলেন।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামের শিক্ষিত নারীদের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৭ এবং ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। সেই হার ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে গিয়ে পৌঁছেছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশে। গ্রামের শিক্ষিত পুরুষদের ক্ষেত্রে ২০০৪-০৫ থেকে ২০১১-১২ অর্থবর্ষ পর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫ এবং ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই হার ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশকি ৫ শতাংশ।
Advertisement
ওই রিপোর্ট অনুয়ায়ী, গ্রামের ১৫-২৯ বছর বয়সী যুবকদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার এখন শোচনীয়। ২০১১-১২ সালে সমাজের এই অংশের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৫ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশে। গ্রামের ১৫-২৯ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রেও বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক। ২০১১-১২ সাল থেকে ২০১৭-১৮, এই ছয় বছরে তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
টিটিএন/এমএস