মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর রচিত সংবিধানের সংশোধনী প্রস্তাব পার্লামেন্টে অনুমোদন ঘিরে ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। পার্লামেন্টের সংরক্ষিত সেনাবাহিনীর সদস্যদের তোপ উপেক্ষা করেই দেশটির সংবিধান সংশোধনের প্রথম প্রস্তাব মঙ্গলবার অনুমোদিত হয়েছে।
Advertisement
২০০৮ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে। এতে সংসদের দুই কক্ষেই সেনাবাহিনীর জন্য এক চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়। তবে সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য অন্তত পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন।
আরও পড়ুন : সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অং সান সু চি
২০১৫ সালের নির্বাচনে এনএলডি ভূমিধস জয় পেলেও সেনাবাহিনীর তৈরি ওই সংবিধানের কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সুচি। সেনা রচিত ওই সংবিধানে বলা হয়, স্বামী, স্ত্রী অথবা সন্তানের যদি বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে দেশটির কোনো নাগরিক মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।
Advertisement
সু চির ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্বামীর ঘরে দুই ছেলে রয়েছে। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ; এরমাঝেই মঙ্গলবার সেনা রচিত সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে এনএলডি।
আরও পড়ুন : নাইকির জুতায় ফের ‘আল্লাহ’ লেখা
মঙ্গলবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ভোটাভুটির পর সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। পরে আগামী শুক্রবার পার্লামেন্টের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এই বিষয়ে আবারো আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়।
পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ সংসদ সদস্য সেনাবাহিনীর। তারা বলেছেন, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটির আলোচনা প্রক্রিয়ার অনুমোদন দেয়া পার্লামেন্টের প্রক্রিয়ার লঙ্ঘন। সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মং মং বলেছেন, আমরা এখনো সেনাপ্রধানের অবস্থানের ব্যাপারে জানি না। এই প্রক্রিয়ায় আমরা অংশগ্রহণ করবো কি-না সেব্যাপারে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
Advertisement
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বলেছি, সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবে আমরা রাজি নই। যে কারণে আমরা পার্লামেন্টে ভোট দেইনি। ভোটের মাধ্যমে সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া পার্লামেন্টের প্রক্রিয়া-পদ্ধতির লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন : আমার দেহে এমন কী আছে, যা অন্য নারীর নেই
সামরিক এই এমপি বলেন, আমরা বলিনি যে, সংবিধানের পরিবর্তন আনা যাবে না। তবে একটি প্রক্রিয়া মেনে এটা করা উচিত। মঙ্গলবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের বিল কমিটির সদস্য ইউ অং কি এনইয়ান্ত এনএলডির পক্ষে জরুরি ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
ইউ অং কি এনইয়ান্ত বলেন, এটি মূলত সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া চালিয়ে নেয়ার জন্য পার্লামেন্টে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব।
প্রস্তাবটি উপস্থাপনের পর পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের স্পিকার এই প্রস্তাবনার ওপর ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত নেন। এসময় সেনাবাহিনীর এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মং মং উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, প্রস্তাব উপস্থাপনের প্রক্রিয়া সংসদীয় পদ্ধতির লঙ্ঘন করেছে।
আরও পড়ুন : ১১ বছর আগে প্রাণ বাঁচানো যুবকই আজ স্বামী
তিনি বলেন, এই প্রস্তাবের ব্যাপারে আগেই এমপিদের জানানো উচিত ছিল। এমনকি তারা জানেনও না যে, কমিটি গঠনের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেই কমিটির ধরন এবং ক্ষমতা কী হবে। স্পিকার ইউ টি খুন মিয়াত সেনাবাহিনীর এই এমপির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং পার্লামেন্টের শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার জন্য তাকে বসার অনুরোধ করেন।
পরে স্পিকার ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত নিলে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সংবিধান সংশোধনীর ওই প্রস্তাব। পার্লামেন্টের ৬০১ সদস্যের মধ্যে ৩৬৯ জন এমপি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। এছাড়া ১৭ জন এমপি প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন, তিনজন ভোটদান থেকে বিরত থাকেন এবং সামরিক এমপিরা ভোট প্রত্যাখ্যান করেন।
সূত্র : মিয়ানমার টাইমস, রয়টার্স।
এসআইএস/এমকেএইচ