আমদানি ও রফতানির প্রকৃত তথ্য গোপন করে ১০ বছরে (২০০৬ থেকে ২০১৫) বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
Advertisement
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) সোমবার অর্থ পাচারের এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
জিএফআই বলছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫৯০ কোটি ডলার বা ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ২০১৪ সালে পাচার হয় ৮৯৭ কোটি ডলার। ২০০৬ থেকে ১০ বছরে পাচারের পরিমাণ ৫ লাখ ২৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা।
বৈদেশিক বাণিজ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও অন্যান্য অবৈধপথে এই অর্থ পাচার করা হয়েছে। অবৈধ অর্থের প্রবাহ (২০০৬-২০১৫) নামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জিএফআই।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য ও পরিমাণ দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) ও রফতানির ক্ষেত্রে কম মূল্য ও পরিমাণ দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) মাধ্যমে কোন দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ বাইরে পাচার হয়ে গেছে এবং অন্য দেশ থেকে একইভাবে কী পরিমাণ অর্থ এসেছে, তার প্রাক্কলন করা হয়েছে।
জিএফআই বলছে, টাকা পাচার হয়েছে এমন শীর্ষ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার চারটি দেশ। অন্য তিন দেশ হলো- ভারত, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন। আবার অন্য দেশ থেকে পাচার হয়ে এসেছে এমন শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে পাচার হয়ে এসেছে ২৮০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থ পাচারের দিকে দিয়ে বাংলাদেশ এশিয়াতে তৃতীয়। এটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। কারণ বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ঘাটতি থাকে। এই অবস্থার মধ্যে যদি ৫ বিলিয়নের বেশি অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়, তবে সেটা দেশের অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও অনিশ্চয়তা থাকলে অর্থ পাচার সাধারণত বাড়ে। এছাড়া দুর্নীতির মাত্রা বেশি থাকলেও এই অর্থ পাচার হয়। ২০১৫ সালটা ছিল একটি রাজনৈতিক সহিংসতার বছর। এছাড়া ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও ছিল। এ জন্য অর্থ পাচারে এশিয়াতে বাংলাদেশ তৃতীয় হয়েছে।
Advertisement
অর্থ পাচার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশে অনিশ্চয়তা বা বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকলে অর্থ পাচার বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ক্রমেই বাড়ছে। এক্ষেত্রে কেন পাচার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি বলেন, বৈধপথে দেশ থেকে অর্থ বিদেশে নেয়া যায় না। কিন্তু কিছু মানুষ আছে, যারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। এই অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত অর্থ বিদেশে নেয়ার বিষয়গুলো রিভিউ করা। আর যদি না করে, তাহলে বন্ধ থাকার পথগুলো কঠিনভাবে মনিটরিং করা উচিত। যেন কোনোভাবেই দেশ থেকে অর্থ বেরিয়ে যেতে না পারে।
জিএফআইর প্রতিবেদন আরও বলছে, উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ অর্থ আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব দেশের সঙ্গে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ তিন হাজার ৩৭৩ কোটি ডলার। আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। রফতানি বাণিজ্যে ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং আন্ডার ইনভয়েসিং হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থ পাচার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ থেকে আসলেই অর্থ পাচার হচ্ছে কি না সেটা আগে খতিয়ে দেখতে হবে। প্রতিবেদনটি এখনো বাংলাদেশে ব্যাংকের দৃষ্টিগোচর হয়নি। আমরা এই প্রতিবেদনটি পেলে জিএফআইয়ের সঙ্গে কথা বলব। বিস্তারিত জানব। এরপর যদি সত্য হয়, তাহলে সেটার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এসআই/বিএ