ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতিতে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা জমজমাট হয়ে ওঠলেও অনেকটাই ক্রেতা সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন থ্রি-পিস বিক্রেতারা। বিভিন্ন অফার দিয়েও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারছেন না তারা। ফলে মেলায় থ্রি-পিসের স্টল দিয়ে বসাদের মুখ অনেকটাই মলিন।
Advertisement
থ্রি-পিস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেলার প্রথম দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল বেশ কম। ফলে বিক্রিও হয়েছে কম। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বেশ বেড়েছে। এতে বেড়েছে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিক্রির পরিমাণ। কিন্তু থ্রি-পিস বিক্রির পরিস্থিতি অনেকটা মেলার প্রথম দিকের মতই রয়েছে। থ্রি পিস বিক্রি অনেকটাই শুক্র-শনিবার নির্ভর হয়ে পড়েছে।
ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মেলায় মাত্র ৫৯৯ টাকায় তিন সেট থ্রি-পিস বিক্রি করছে একাধিক পোশাকের প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ৯৯৯ টাকার প্যাকেজেও দেয়া হচ্ছে তিন সেট থ্রি-পিস। আছে এক হাজার টাকায় দুই সেট থ্রি-পিস কেনার অফারও। দেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশিদের নামে নেয়া প্যাভিলিয়নেও এ অফার দেয়া হচ্ছে।
তিন সেট থ্রি-পিস ৫৯৯ টাকায় বিক্রি করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫১ নম্বর প্যাভিলিয়নে। মেলার পূর্বদিক বা ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই পোশাকের এই স্টলটির দেখা মিলবে। স্টলের এক কোণে 'গোল্ডেন অফার ৩ সেট থ্রি-পিস ৫৯৯ টাকা' লিখে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
Advertisement
মেলার প্রথম থেকেই এমন অফার দেয়া হলেও স্টলটিতে ক্রেতা-দর্শনার্থীর খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি। গত কয়েক দিনের মতো শনিবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ক্রেতা-দর্শনার্থী না থাকায় স্টলটির বিক্রয়কর্মীদের অনেকটাই অলস সময় পার করতে হচ্ছে।
মো. কামাল নামে স্টলের এক বিক্রয় কর্মী বলেন, আমরা গোল্ডেন অফারের আওতায় ক্রেতাদের ৫৯৯ টাকায় তিন সেট থ্রি-পিস দিচ্ছি। এটা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এক ধরনের ব্যবসায়িক কৌশল। অফারের বাইরে আমরা আলাদা আলাদাভাবে থ্রি-পিস বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় অফার দেয়া হলেও তাতে খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সময় ক্রেতা-দর্শনার্থী শূন্য থাকছে স্টল। শুধু শুক্র-শনিবার কিছু বিক্রি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে মালিকের পক্ষে আমাদের বেতন দেয়া কঠিন হয়ে যাবে।
বাহারি থ্রি-পিসের পসরা সাজানো হয়েছে মেলার আরেকটি প্যাভিলিয়ন থাই গ্যালারিতে। এখান থেকে এক সেট থ্রি-পিস ৬৫০ টাকা এবং দুই সেট থ্রি-পিস এক হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন দামের থ্রি-পিস।
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটিতে বিক্রয় কর্মীর দায়িত্ব পালন করা জুবায়ের নামে একজন বলেন, ভাই বিক্রি পরিস্থিতি মোটেই ভালো না। আমাদের সব থ্রি-পিস বিদেশি। এগুলোর মান খুবই ভালো। ভালো মানের বিদেশি পণ্যের এমন অফার দেয়ার পরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না এটা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, মেলার প্রথম দিকে ক্রেতা-দর্শনার্থী কম ছিল। সে সময় বিক্রি কম হয়েছে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে মেলায় যথেষ্ট ক্রেতা-দর্শনার্থী আসছেন। ফলে বেশিরভাগ স্টল ক্রেতা-দর্শনার্থীতে ভরপুর হয়ে উঠছে। কিন্তু আমরা যারা থ্রি-পিসের স্টল দিয়ে বসেছি তাদের দুর্দিন যাচ্ছে। স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থী খুব একটা আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে মেলার খরচ ওঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে।
মেলায় থ্রি-পিসের স্টল দিয়ে বসা আরেকটি প্রতিষ্ঠান জান্নাত এন্টারপ্রাইজ। অন্যান্য থ্রি-পিস বিক্রেতাদের মতো এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিও খুব একটা ভালো নয় বলে জানান বিক্রয়কর্মী ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের বিক্রি পরিস্থিতি মোটেই ভালো না। শুধু শুক্র-শনিবার কিছু বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের বাকি পাঁচদিন অনেকটাই ক্রেতা সঙ্কট চলছে। এর আগেও বাণিজ্য মেলায় এসেছি। কিন্তু এরকম আগে কখনও হয়নি। মেলার প্রায় শেষ সময় চলে এসেছে, আর মাত্র দিন দশেক বাকি আছে। দেখা যাক শেষ মুহূর্তে বিক্রি পরিস্থিতি পরিবর্তন হয় কি না।
এমএএস/এমএমজেড/আরআইপি