সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুর পৌরসভার (বরখাস্তকৃত) মেয়র হালিমুল হক মিরুকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন বাতিল করেছেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে ৬ মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
এর ফলে আপাতত মেয়রের মুক্তি মিলছে না। তবে, জামিন বাতিল হওয়ায় খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিমুলের স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
জামিনের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের শুনানি শেষে রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আজ মেয়র মিরুর জামিন বাতিল চেয়ে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। তাকে সহায়তা করেন মো. ফখরুল ইসলাম এবং মিরুর পক্ষে ছিলেন এএম আমিনউদ্দিন ও আবদুল আলিম জুয়েল। এ সময় আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
Advertisement
রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিল করেছেন। একইসঙ্গে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সিরাজগঞ্জের বিচারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কোনো কারণে ওই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হলে আসামি জামিন আবেদন করতে পারবেন।
গত ৪ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মিরুকে জামিন দেন। ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী। গত ৮ নভেম্বর চেম্বারজজ আদালত কোন আদেশ না দিয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি পাঠিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগ ১২ নভেম্বর মিরুর জামিন আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে, দুই সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল (সিপি) দাখিল করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আদেশের পর সাংবাদিকের স্ত্রী বলেন, মেয়র জেলখানা থেকে বের হলে যে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। জামিন বাতিল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পৌর মেয়রের দুই ভাই মিন্টু ও পিন্টুর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের গণ্ডগোল বাধে। এরপর বিজয়কে তুলে নিয়ে মেয়রের বাড়িতে আটকে মারধর করে হাত ভেঙে দেয়া হয়। এ নিয়ে নিজ দলের একটি পক্ষের সঙ্গে মিরু, মিন্টু, পিন্টু, নাছিরসহ মেয়রের সহযোগীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন, খবর সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গিয়ে সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন বগুড়া থেকে ঢাকায় আনার পথে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী বাদী হয়ে মেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার সহোদর মিন্টু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নাছিরসহ জ্ঞাত ১৮ এবং অজ্ঞাত আরও প্রায় ২২ জনসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
Advertisement
হত্যাকাণ্ডের তিন মাস পর ২০১৮ সালের ২ মে শিমুল হত্যা মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। চার্জশিটে বলা হয়, মেয়র মিরুর গুলিতেই শিমুলের মৃত্যু হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে মেয়র মিরুর লাইসেন্স করা শটগান ছাড়াও তার ভাই হাবিবুল হক মিন্টুর অবৈধ পাইপগান ব্যবহার করা হয়। মিরু ও মিন্টু দু’জনই ঘটনার দিন শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।
২০১৭ সালের ১৩ জুন শাহজাদপুরের আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের পর মিরুকে মেয়র পদে থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মিরু সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। মিরু বর্তমানে সিরাজগঞ্জ কারাগারে।
এদিকে, গত ২৩ মাসেও আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়নি। আলোচিত এ হত্যা মামলার চার্জ গঠন করা হয়নি। আসামি পক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে মামলার বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতে চার্জ গঠনের জন্য দিন ধার্য থাকলেও নানা কারণ দেখিয়ে তা পিছিয়ে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন সিরাজগঞ্জের আদালত। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর হিসেবে মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরে জন্য গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও এ পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়নি।
এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম