রাজধানী ঢাকা, ক্রীড়াকেন্দ্র ঢাকা এখন ক্রিকেট তারকায় ঠাসা। কে নেই? বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় বড় তারকা এখন রাজধানী ঢাকায়। ২০ ওভারের ফরম্যাটের সব নামী-দামি তারকার তালিকা করতে গেলে যে নামগুলো খুব ওপরের দিকে থাকবে সেই ক্রিস গেইল, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, আন্দ্রে রাসেল, ইয়ান বেল, অ্যালেক্স হেলস, এভিন লুইস, সুনিল নারিন, কার্লোস ব্রাথওয়েট, শোয়েব মালিক, লাসিথ মালিঙ্গা, শহীদ আফ্রিদী, ইমরান তাহির প্রমুখ ক্রিকেটার এখন ঢাকায়।
Advertisement
এই সব তারাদের অংশগ্রহণে শনিবার পর্দা উঠছে বাংলাদেশের আলোচিত-আলোড়িত ও সাড়া জাগানো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর বিপিএল। আসর শুরুর প্রহর যত ঘনিয়ে আসছে একটি প্রশ্ন আর গুঞ্জন ততই শোনা যাচ্ছে- ‘আচ্ছা, ট্রফি জিতবে কোন দল? চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স পারবে শিরোপা ধরে রাখতে?'
সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস কি আগের বার ফাইনালে না পারার আক্ষেপ ঘোচাতে পারবে? নাকি তামিম ইকবাল আর স্টিভেন স্মিথের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবার ট্রফি হাতে ভিক্টরি ল্যাপ দেবে? ওদিকে এক ঝাঁক মেধাবি তরুণের সাথে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে ‘ডার্ক হর্স’ সিলেট সিক্সার্স আবার সবাইকে পিছনে ফেলবে না তো?
তরুণ মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণের দল রাজশাহী কিংস কতদূর যাবে? কিংবা মুশফিকুর রহিমের চিটাগাং ভাইকিংস আর মাহমুদউল্লাহর খুলনা টাইটান্স কি শিরোপা দৌড়ে থাকতে পারবে?- এসব প্রশ্ন এখন প্রতিটি ক্রিকেট অনুরাগির মনে উকিঝুঁকি দিচ্ছে।
Advertisement
যতই সময় গড়াবে ততই এ প্রশ্ন ডালপালা গজাবে। তবে আপাতত আসর শুরুর অপেক্ষা। ক্রিকেট এমনিতেই অনিশ্চয়তার স্যালোফেন মোরানো। তার মধ্যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট হচ্ছে আরও অনিশ্চয়তায় ভরা। যার পরতে পরতে ওঠা নামা আর উত্থান-পতনের পালা।
বিশ ওভারের ফরম্যাটে তাই নিশ্চিত বলে কিছু নেই। এখানে দলগত শক্তির ভারসাম্য-তারতম্য সব এক পলকে ঢাকা পড়ে যায় কারো একার নৈপুণ্যে। দুইশ বা তার বেশী স্ট্রাইক রেটের একটি ঝড়ো ইনিংস বদলে দিতে পারে, দেয়ও ম্যাচের চালচিত্র। দু থেকে তিনটি কখনো বা দুটি ওভারই যথেষ্ঠ ম্যাচের পুরো দৃশ্যপট পাল্টে দিতে ।
সেই অনিশ্চয়তায় মোড়ানো আসর সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা তাই ঝুঁকিপূর্ণ। মাশরাফি বিন মর্তুজা মত তুখোর ক্রিকেট যোদ্ধা সফল সেনাপতির মনেও রাজ্যের দ্বিধা।
আসলে কে ফেবারিট তা বলা কঠিন। কাউকে এগিয়ে রাখাও ঠিক না। ক্রিকেটের এই একটি ফরম্যাটে আসলে ফেবারিট শব্দটির অস্তিত্ব খুব কম। আর বিপিএলে দলগুলোর শক্তির তারতম্য আরও কম। ১৯-২০ বা ১৮-২০। সেটাও বদলে যেতে পারে নির্দিষ্ট দিনের অ্যাপ্রোচ-পারফরমেন্স আর কারো একার নৈপুণ্যের দ্যুতিতে।
Advertisement
‘এবারের বিপিএলের ফেবারিট কে? কোন দলগুলোকে সম্ভাব্য সেরা শক্তি ও সম্ভাবনাময় দল মনে হচ্ছে?’ জাগো নিউজের কাছ থেকে যখন প্রশ্নটা ছুড়ে দেয়া হলো, তখন মাশরাফির ছোট্ট জবাব কুমিল্লা, ঢাকা, রংপুর আর সিলেট?
বিপিএলের ট্রফিটা যিনি প্রায় নিজের করে ফেলেছেন সেই মাশরাফি একা নন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ সালাউদ্দীন আর ঢাকার দৌনাচার্য্য খালেদ মাহমুদ সুজনও তাই মনে করেন। তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে মূল লড়াইটি আসলে ঢাকা, রংপুর, কুমিল্লা আর সিলেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাকিরা মানে রাজশাহী, চিটাগাং আর খুলনা পারবে না কিছুই করতে- তা বলার অবকাশ নেই। তবে এই তিন দলের সম্ভাবনা তুলনামুলক কম বলেই মনে হচ্ছে।
কেন ঢাকা, রংপুর, কুমিল্লা আর সিলেট এগিয়ে? আর খুলনা, রাজশাহী ও চিটাগাং কি কারণে পিছিয়ে? নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে। তার কারণ পরিষ্কার। রংপুর, কুমিল্লা, ঢাকা ও সিলেটে ম্যাচ জেতানো পারফরমার তুলনামুলক বেশী।
এই চার দলে বিশেষ করে রংপুর, ঢাকা ও কুমিল্লায় এমন কিছু হাই প্রোফাইল বড় নামি ও দামি তারকা পারফরমার আছেন যারা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনেক বেশী কার্যকর। একাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। অনেক দিয়েছেনও। বেশী দূর যাবার দরকার নেই ক্রিস গেইলের কথাই ধরুন। এইতো আগের বার বিপিএল খেলতে এসে শুরুতে কয়েক ম্যাচ রান পাননি। মনে হলো ছোট পরিসর ক্রিকেটের ‘সিংহ’ বুঝি ঘুমিয়ে। তারপর এলিমিনেটর ম্যাচে গিয়ে ঘুম ভাঙ্গলো ঘুমন্ত সিংহের। সেই ম্যাচে একাই রংপুরকে টেনে তুললেন গেইল।
খুলনা টাইটান্সের সাথে এলিমিনেটরে গেইলের ব্যাট থেকে আসলো ২৪৭.০৬ স্ট্রাইকরেটে ১২৬ রানের (৫১ বলে) এক উত্তাল ইনিংস। আর তাতেই লন্ড ভন্ড খুলনা বোলিং ফিল্ডিং। গেইলের চওড়া ব্যাটেই কোয়ালিফায়ার ২-এ পৌছে যাওয়া। শেরে বাংলায় ফাইনালে আবার গেইল ঝড়; ২১১.৫৯ স্ট্রাইকরেটে ৬৯ বলে ১৪৬ রানের হ্যারিক্যান ইনিংস। ঐ এক ঝড়ো ইনিংসের তান্ডবে খড়কুটের মত উড়ে গেলো সাকিব, আফ্রিদী ও নারিনদের ঢাকার সব প্রতিরোধ। ফাইনালে দল জেতানোর নায়ক গেইল ১৮ ছক্কা হাকিয়ে বিশ্ব রেকর্ডও গড়ে বসেন।
কাজেই ইতিহাস-পরিসংখ্যান জানাচ্ছে গেইল ‘একাই একশো’। যে কোন দিন, যে কোন সময় যে কারো বিপক্ষে একাই ম্যাচ পাল্টে দিতে পারেন। তার একক নৈপুন্যে দল জিততে পারে।
গেইলের মত না হলেও কাছাকাছি ক্ষমতার আরও কজন পারফরমার আছেন এবারের বিপিএলে। তারই একজন এবি ডি ভিলিয়ার্স। প্রচন্ড মেরে খেলার ক্ষমতা আছে এ প্রোটিয়া উইলোবাজের। গেইলের মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে অবললীলায় লং অফ-লং অন আর মিড উইকেট ও এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে মুড়িমুড়কির মত ছক্কা হাকাতে না পারলেও নিজের মত করে নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতায় ডি ভিলিয়ার্সও পারেন ব্যাট হাতে ঝড় তুলে প্রতিপক্ষ বোলিং-ফিল্ডিং চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে।
সে ক্ষমতা আছে এভিন লুইসেরও। এ ক্যারিবীয়ান ওপেনারও কিন্তু কম যাননা। গেইলের মত ছক্কা হাকানোর পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে লুইসের। এর বাইরে আরও জন চারেক পারফরমার আছেন, যাদের ব্যটি যে কোন সময় জ্বলে উঠতে পারে। তারাও একাই দল জেতাতে পারেন। সেই দলে আন্দ্রে রাসেল, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার আর অ্যালেক্স হেলসকে ফেলা যায়।
গেইল, ডি ভিলিয়ার্স আর হেলসের উত্তাল উইলোবাজিই বড় সম্পদ রংপুরের
ওপরে যাদের কথা বলা হলো, তারা কেউই এক দলের নন। তারপরও একটু লক্ষ্য করুন, রংপুর রাইডার্সেই আছেন সর্বাধিক তিনজন- গেইল, ডি ভিলিয়ার্স আর হেলস । এক দলে তিন তিনজন মারকুটে উইলোবাজ। যারা নিজেদের খুঁজে পেলে প্রতিপক্ষর আর রক্ষা নেই। মার শুরু হলে আটকে রাখা কঠিন।
এমন তিন তিনজন বিধ্বংসী উইলোবাজের দল রংপুরকে তাই এগিয়ে রাখতেই হচ্ছে। আর সে দলটির অধিনায়ক যে মাশরাফি বিন মর্তুজা, বিপিএল তার সাফল্যের আসর হয়ে গেছে। আগের পাঁচ বারে সর্বাধিক চারবারের শিরোপা বিজয়ী দলের অধিনায়ক মাশরাফি।
তার দল পরিচালনার ক্ষমতা দারুণ! কি এক সম্মোহনী ক্ষমতায় পুরো দলকে কাছে টানেন। সবাই তাকে মানে। তার কথা শোনে। পুরো দল যেন একটা পরিবার হয়ে যায়। ভাল খেলার সর্বোচ্চ তাগিদ জন্মায় সবার। সেটাই মাশরাফির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। তাই পারফরমার মাশরাফি ছাপিয়ে বিপিএলে অধিনায়ক মাশরাফি অনেক বড়। অনেক সফল।
এছাড়া তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে লক্ষ্য-পরিকল্পনা নির্ধারন এবং কার্যকর ও লাগসই কৌশল নির্ধারণটাও যে কারো চেয়ে ভাল। সব মিলে অধিনায়ক মাশরাফি হলেন বিপিএলে সাফল্যের ‘ব্যাটারি’। তাকে পেলেই দল চার্জড আপ হয়ে ওঠে। সাফল্য পায়।
তবে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট তুলনামুলক কমজোরি। এক্সপ্রেস বোলার নেই বললেই চলে। মাশরাফির সাথে দেশের শফিউল ইসলাম, ফরহাদ রেজা আর আবুল হোসেন রাজু এবং ওয়েষ্ট ইন্ডিজের শেল্ডন কট্রেল। স্পিন ডিপার্টমেন্টে অফস্পিনার সোহাগ গাজী আর বাঁহাতি নাজমুল অপু চালিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখেন। সব মিলে তাই রংপুর এবারো অন্যতম সেরা দল। এর পর সাকিবের ঢাকা আর তামিম ও স্টিভেন স্মিথের কুমিল্লা।
টি-টোয়েন্টি মূলত ব্যাটসম্যানের খেলা। তাই বলে বোলারের কিছুই করার থাকে না এমন নয়। প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উত্তাপ উইলোবাজি থামানোর ক্ষমতা না থাকলে টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ জেতা কঠিন। তাই শুরুতে আক্রমণাত্মক উইলোবাজ, মাঝখানে খেলার গতি-প্রকৃতি বুঝে রানের চাকা সচল রাখা এবং শেষদিকে হাত খুলে স্কোরকার্ডকে মোটা তাজা করার মতো পারফর্মার যেমন প্রয়োজন, একইভাবে শুরুর ছয় ওভারের পাওয়ারপ্লে এবং ডেথ ওভারে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখার বোলিংটাও যে খুব দরকার।
সেই জায়গায় ঢাকা, রংপুর আর কুমিল্লার কেউই এককভাবে সেরা শক্তি নয়। কারো টপঅর্ডার দারুণ শক্তিশালী ও বিধ্বংসী। কারো বা ব্যাটিং শক্তি মিডল অর্ডার নির্ভর। একইভাবে কারো পেস বোলিংটা বেশি ধারালো, আবার কোনো দলের স্পিন শক্তি বেশি জোরদার। কাজেই ঢাকা, কুমিল্লা ও রংপুরের মধ্যে কাউকে এককভাবে সেরা বলা কঠিন।
সাকিব-আন্দ্রে রাসেল আর নারিনই ঢাকার মূল শক্তি
পারফরমার সাকিব ঢাকা ডায়নামাইটসের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শক্তি ও কার্যকর অস্ত্র। যার বল ও ব্যাট দুইই সমান কার্যকর। গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, এভিন লুইস আর আন্দ্রে রাসেলদের মত বড় বড় ছক্কা হাঁকিয়ে মাঠ গরম করতে না পারলেও সাকিব পারেন ঝড়ো ইনিংস খেলতে। বোলিংটাই সাকিবের প্লাস পয়েন্ট। এই জায়গায় সাকিব অনেক উপরে। পুরো বিপিএলে সাকিবের চেয়ে ভাল স্পিনার খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। দুজনকে খুঁজে বের করা সম্ভব। যার একজন সুনিল নারিন। আর অন্যজন শহীদ আফ্রিদী।
সুনিল নারিন এবারো ঢাকায় সাকিবের সঙ্গী। কাজেই দলটির স্পিন বোলিং খুব ধারালো। সাথে আন্দ্রে রাসেল আর কাইরন পোলার্ড আছেন। আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট ও বল দুইই সমান। সম্ভবত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার এই আন্দ্রে রাসেল। তার দিনে তার ব্যাট ও বলকে আটকে রাখা খুব কঠিন। রাসেল একাই যে কোন দলের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া ইয়ান বেলের মত পরিণত ও প্রতিষ্ঠিত পারফরমারও সাকিবের দলের বড় সম্পদ।
দলটির মিডল অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং অনেক শক্তিশালি ও লম্বা। পেস বোলিংটাও মন্দ না। অধিনায়ক সাকিবের হাতে কিছু ভাল অপশন আছে। প্রতিষ্ঠিত দুই দ্রুত গতির বোলার রুবেল হোসেন ও শাহাদাত হোসেন রাজিবের সাথে সম্ভাবনাময় কাজী অনিক আর মোহর শেখ আছেন পেস ডিপার্টমেনেট।
দলটির তূলনামুলক কম শক্তির জায়গা হলো টপ অর্ডার। একদম ওপরে গেইল, এভিন লুইসের মত অতি আক্রমণাত্মক উইলোবাজ তথা বিধ্বংসী ওপেনার নেই। যিনি একাই প্রতিপক্ষ বোলিংকে এলোমেলো করে দিতে পারেন। হয়ত সুনিল নারিনকে দিয়ে সে কাজ চালানোর চেষ্টা করবেন অভিজ্ঞ কোচ খালেদ মাহমুৃদ সুজন। নারিন আজকাল ওপেন করতে নেমে বেশ হাত খুলে খেলেন।
ঝানু যোদ্ধা দৌনাচার্য্য খালেদ মাহমুদ সুজনও ঢাকার বড় শক্তি। সুজনের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ। বিশেষ করে দেশের মাটিতে কোন উইকেটে, কোন পরিস্থিতিতে কি কৌশল অবলম্বন করতে হবে? কাকে কোথায় কিভাবে ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যাবে- এসব খুব ভাল জানা ও বোঝা সুজনের। কাজেই ঢাকা খুব ভাল দল। প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ কঠিন।
তামিম-এভিন লুইস আর স্মিথই বড় নির্ভরতা কুমিল্লার
এরপরই চলে আসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের প্রসঙ্গ। দলটির ব্যাটিং-বোলিং দুই ডিপার্টমেন্টই সমান শক্তিশালী। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, মেহেদি হাসান, জিয়াউর রহমানের মত ফ্রি স্ট্রোক প্লেয়ার আছেন। তাদের সাথে এভিন লুইস, স্টিভেন স্মিথ, শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদী এবং থিসারা পেরেরাও আছেন। যারা সবাই হাত খুলে খেলতে পারেন এবং সময়ের দাবি মেটানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য রাখেন।
দলটির পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টও বেশ ভাল। আবু হায়দার রনি আর সাইফউদ্দীন আছেন। সঙ্গে জিয়া এবং মোহাম্মদ শহিদও আছেন। কুশলী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন খুব ভালই জানেন এদের কাকে কখন কার সঙ্গে কোথায় ব্যবহার করতে হবে।
তামিম-এভিন লুইস জ্বলে উঠলে কুমিল্লার শুরু হবে উল্কার গতিতে। তবে তামিম ও লুইসের সাথে ইমরুল আর বিজয় তাল মেলাতে পারবেন কি-না? সেটাও দেখার। দেখা গেল, তামিম আর এভিন লুইস পাওয়ার প্লে’তে ৬ ওভারে ১০ রান করে তুলে দিলেন, তারপর ইমরুল আর বিজয় সেটা ৭’এ নামিয়ে আনলেন। তখন মিডল অর্ডারের ওপর চাপ পড়বে। দক্ষ কোচ সালাউদ্দীন কিভাবে সেই রান চাকা সচল রাখার পরামর্শ দেন এবং ব্যাটিং লাইন আপ কেমন ভাবে সাজান? সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে সেটা কভার করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে স্টিভেন স্মিথের।
এই সাবেক অজি অধিনায়কও হতে পারেন কুমিল্লার এবারের অন্যতম বড় ও কার্যকর অস্ত্র। মোদ্দা কথা তামিম, এভিন লুইস আর স্টিভেন স্মিথ এই ত্রয়ো যদি এক সাথে জ্বলে উঠতে পারেন, তাহলে কুমিল্লাকে আটকে রাখা কঠিন হবে।
‘ডার্ক হর্স’ সিলেটের বাড়তি রসদ ওয়ার্নার
ফেবারিটের তকমা গায়ে নেই। সিলেট সিক্সার্স হলো এবারের ‘ডার্ক হর্স’। নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন ধ্রুব, তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ আল আমিন হোসেন, তৌহিদ হৃদয়, নাবিল সামাদ আর এবাদত হোসেনের মত এক ঝাঁক সম্ভাবনাময় ও মেধাবি তরুণের ঠিকানা এবার সিলেট। তাদের সাথে অস্ট্রেলিয়ান তারকা ডেভিড ওয়ার্নার, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশেষ পারদর্শী ও অভিজ্ঞ পেসার সোহেল তানভির এবং দুই লেগস্পিনার ইমরান তাহির এবং সন্দীপ লামিচানের গড়া সিলেট সিক্সার্স আসলে ‘মাল্টি স্কিল্ড’ পারফরমারের দল।
যাদের ব্যাটিং ও বোলিংয়ে খুব যে আহামরি বিধ্বংসী আর অতি কার্যকর পারফরমার আছেন, তা নয়। তবে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে বিকল্প পারফরমারের সংখ্যা তুলনামূলক বেশী। যাদের সামর্থ্য আছে ম্যাচের ভাগ্য গড়ার। লিটন দাস, সাব্বির রহমান আর নাসির হোসেনের সামর্থ্য নিয়ে নতুন করে বলার ও লিখার কিছু নেই। তারা পারেন। জানেন কখন কোথায় কি করতে হবে? সেই সামর্থ্যের প্রয়োগ কতটা ঘটে সেটাই দেখার। ডেভিড ওয়ার্নার যদি জ্বলে উঠতে পারেন আর লিটন, সাব্বির ও নাসির যদি তার সাথে হাত মিলিয়ে পারফরম করতে পারেন, তাহলে সিলেট অনেক দলের মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে। দলটির লেগস্পিন অস্ত্রটাও বেশ; ইমরান তাহির আর সন্দীপ লামিচানে। সব মিলে সিলেটও কম যাবে না।
তারুণ্য নির্ভর রাজশাহী
তার পরপরই যে দলটির কথা ভাবা হচ্ছে, সেটা হলো রাজশাহী। সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মোস্তাফিজুর রহমান, আরাফাত সানি আর জাকির হাসানের মত টগবগে তরণরা আছেন রাজশাহীতে। যারা ফুঁটতে শুরু করলে সে আগুনে পুড়ে ছারখার হতে পারে অনেক বড় দলও।
দলটির পেস আক্রমণও মন্দ নয়। কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজের সাথে কামরুল ইসলাম রাব্বি আর ইসুরু উদানার মিশ্রনে রাজশাহীর পেস আক্রমনে ধার আছে। বৈচিত্রও আছে। এদের সাথে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজের মিশ্রণটাও দলের শক্তি বাড়াবে। সব মিলে রাজশাহী দারুণ এক দল। তবে যেহেতু বেশীর ভাগই তরুণ, তাই খানিক সংশয় থেকেই যায়। তারপরও সৌম্য-মুমিনুল আর মিরাজ এবং মোস্তাফিজের ভাল খেলা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়। এই চার জন ধারাবহিকভাবে ভাল খেলতে পারলে রাজশাহী যে কোন দিন যে কাউকে চমকে দিতে পারে।
এর বাইরে থাকলো আর দুটি দল; খুলনা টাইটান্স আর চিটাগাং ভাইকিংস। দুটিই প্রায় ‘ওয়ানম্যান শো’। যথাক্রমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিম নির্ভর।
রিয়াদ নির্ভর খুলনা আর ওয়ানম্যান শো চিটাগাংয়ের চালিকাশক্তি মুশফিক
তারপরও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্সে আছেন জুনায়েদ সিদ্দিকী, জহুরুল ইসলাম অমি, আরিফুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ আল আমিন, তাইজুল ইসলাম, শুভাশিষ রায় ও শরিফুল ইসলামের মত পরিচিত ক্রিকেটার। যারা ভাল পারফরমার হিসেবেই সমাদৃত। সাথে ব্রাথওয়েট, ডেভিড মালান, লাসিথ মালিঙ্গা, ইয়াশির শাহ আর ব্রেন্ডন টেলরের মত অভিজ্ঞ বিদেশী পারফরমাররাও আছেন। সব মিলে খুলনাকে খাট করে দেখার কিছু নেই। মাঝারী মানের পারফরমারের ছড়াছড়ি। কিন্তু টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেমন মার মার কাটকাট উইলোবাজ আর তুখোড় স্পিনার ও বিধ্বংসী পেসারের দরকার- সেটায় কমতি খুলনার।
আর সবশেষে চলে আসে চিটাগাং ভাইকিংসের কথা। যে দলটির অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। সাথে মোহাম্মদ আশরাফুলের মত অভিজ্ঞ যোদ্ধাও এবার চিটাগাংয়ে। এর বাইরে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়া ইয়াসির আলী দলটির ব্যাটিং স্তম্ভ। পরিপাটি ব্যাটিং শৈলির সাদমান ইসলামও এবার চিটাগাংয়ে। এছাড়া সিকান্দার রাজা, আফগানিস্তানের মারকুটে ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ, নজিবুল্লাহ জাদরান, লুক রনকি, রবি ফ্রাইলিংক, ক্যামেরন ডেলপোর্ট এবং দাসুন শানাকাও আছেন ফরেন কোটায়।
সব মিলে অ্যাভারেজ দল। মুশফিকুর রহিমের জ্বলে ওঠার ওপর দলটির ভাগ্য নির্ভর করছে অনেকটাই। আর সাথে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তিন আসর পর খেলতে আসা আশরাফুল যদি কিছু করে বসেন। মূলত এই দুজনই আশা ভরসা চিটাগাংয়ের। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই দল নিয়ে খুব বেশী দূর যাওয়া কঠিন।
এআরবি/এসএএস/এমএস