মন্দিরে লিঙ্গবৈষম্যের প্রতিবাদে ৬২০ কিলোমিটারের (৩৮৫ মাইল) দীর্ঘ মানববন্ধন করেছে ভারতের কেরালা রাজ্যের নারীরা। শনিবার মানবাধিকার একটি গ্রপ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। ভারতের আলোচিত শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার নিয়ে বিতর্কের পর এ মানববন্ধন করল নারীরা।
Advertisement
মন্দিরটিতে ঋতুমতী মেয়েদের (বয়স ১০ থেকে ৫০) প্রবেশ আটকাতে রাজ্যের বিজেপি নেতারা এখনও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। তাছাড়া শবরীমালায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকির জন্য হাইকোর্ট একটি তিন সদস্যের কমিটি গড়ে দিলেও কোনো কিশোরী বা যুবতী এখনও মন্দিরে ঢুকতেই পারেননি।
সেপেম্বরে ভারতের শীর্ষ আদালত শবরীমালা মন্দিরে নারীদের ওপর আরোপিত বাধানিষেধ তুলে নিলেও রক্ষণশীলরা নারীদের প্রবেশের প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ চার হিজড়াকে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। সরকারি কর্মকর্তারা বিবিসির হিন্দের প্রতিনিধি ইমরান কুরেশিকে জানিয়েছেন, কেরালা অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৫০ লাখ নারী একযোগে রাজ্যের সব সড়কে মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনটি অঙ্গরাজ্যটির উত্তরাঞ্চল কাসারদগোদ থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণের থিরুভানধাটুরামে শেষ হয়।
আয়োজকরা আশা করেছিলেন, তারা কমপক্ষে ৩০ লাখ নারীর সমাগম করতে সক্ষম হবেন। তবে তাদের প্রত্যাশারও ২০ লাখ ছাড়িয়ে যায় মানববন্ধনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
Advertisement
কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার সমর্থিত একটি গ্রুপ প্রথম থেকেই শরবীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশের বিষয়ে বিরোধিতা করে আসছে। তাদের এ লিঙ্গবৈষম্যের প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী কবিতা দাস বিবিসি হিন্দকে বলেন, ‘আমাদের এই মানববন্ধনের উদ্দেশ্যেই হলো সমাজের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া যে, আমরা কতটা শক্তিশালী, আমরা নিজেদেরকে কীভাবে শক্তিশালী করতে পারি এবং আমরা একে অপরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই মন্দিরে সব বয়সী নারীদের প্রবেশের সুযোগ দেয়ার পক্ষে। আমি মনে করি না ঐতিহ্য ও অনগ্রসরতার দোহাই দিয়ে নারীদের থামানো উচিত। যে বা যারা প্রার্থনা করতে চাই তাদের প্রার্থনা করার সুযোগ দেয়া উচিত। কারণ এটা তাদের অধিকার।’
মানববন্ধনে আরেকজন অংশগ্রহণকারীর নাম তনুজা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আজকের এই মানববন্ধনের উদ্দেশ্য শুধু শবরীমালা মন্দির নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মরে করি, নারী ও পুরুষ উভয়ই সমান।’
Advertisement
ঋতুমতী বয়সের মেয়েদের প্রবেশাধিকারকে কেন্দ্র করে গত কয়েকমাস ধরে তুমুল বিতর্ক আর আন্দোলন চলছে শবরীমালা মন্দিরকে ঘিরে। শবরীমালায় দশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সী নারীদের ঢোকার অনুমতি দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় রয়েছে। তবে প্রায় তিনমাস হতে চললেও এ রায়ের বাস্তবায়ন হয়নি। ভক্তদের তুমুল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে আজ পর্যন্ত ওই হিন্দু মন্দিরে ওই বয়সী কোনো নারী ঢুকতে পারেননি।
মূলত শরবীমালা মন্দিরে প্রবেশের পথে বাধা ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বিরোধিতা। তারা মনে করে, শরবীমালা মন্দিরে নারীদের প্রকেশের অনুমতি দিয়ে শীর্ষ আদালত হিন্দু রীতিনীতির প্রতি আঘাত হেনেছে।
এসআর/পিআর