একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের নির্বাচনের বিষয়টি স্থগিত করেননি হাইকোর্ট। ফলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদের কোনো বাধা নেই।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদালত রুল দিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন কোনো নির্দেশনা দেননি। ফলে জামায়াতের ওই ২৫ নেতা যথারীতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রতি রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে জামায়াতের ২৫ জনের প্রার্থিতা বহাল রাখার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
Advertisement
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন ড. ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ইয়াসীন খান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শানজানা ইয়াসীন খান। অন্যদিকে প্রার্থীদের পক্ষে ছিলেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, আশরাফুজ্জামান, সাইফুর রহমান, মতিউর রহমান আকন্দ, শিশির মুহাম্মদ মনির প্রমুখ।
প্রার্থীদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করার বিষয়টি স্থগিত চেয়ে রিট করা হয়েছিল। এই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত রুল দিয়েছেন তবে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো নির্দেশনা দেননি।
আদালত নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত না করায় কিংবা জামায়াতের ২৫ প্রার্থীকে ভোটের অযোগ্য ঘোষণা না করায় তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো আইনি বাধা থাকছে না।
Advertisement
সঙ্গে সঙ্গে রুল জারি করেছেন আদালত, রুলে বিএনপির তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে ও স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়া ওই ২৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে করা আবেদনটি নামঞ্জুর করে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিব, জামায়াতের ২৫ প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন খান সাংবাদিকদের বলেন, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর আবেদনটি যথাযথ হয়নি। এই বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার, তারা যেহেতু রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন সেখানে বিফল হওয়ার পরে তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে কোনো আপিল করেননি। জামায়াত প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপর পড়ে না।
তিনি আরো জানান, রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ২৫ জনকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণার আবেদন করা হয়েছিল রিটে। আদালত সে নির্দেশনা দেয়নি। ফলে ২৫ প্রার্থীর নির্বাচন করতে বাধা নেই।
এর আগে (২৬ ডিসেম্বর) নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা অনুমোদন ও প্রতীক বরাদ্দ বাতিলের কোনো সুযোগ নেই বলে নির্বাচন কমিশন (ইসির) সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়েছিল।
বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর পক্ষে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর এ রিট আবেদন করেন।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর জাগো নিউজকে বলেন, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতের ইসলামীর প্রার্থিতা আইনগতভাবে বাতিলের সুযোগ নেই বলে নির্বাচন কমিশন যে চিঠি দিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেছিলাম।
এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর (সোমবার) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী একটি রিট দায়ের করেছিলেন।
পরে ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি শেষে রুল জারি করে আদেশ দেন। আদেশে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ চারজনের আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন।
২০০৮ সালে তরিকত ফেডারেশনের দায়ের করা এক রিট মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন (২০১৩ সালের ১ আগস্ট) অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন।
এর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল করলেও তারা এর শুনানি করেননি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অন্য দলের প্রতীক ও স্বতন্ত্র হয়ে তারা নির্বাচন করছেন। আইনের প্রতিষ্ঠিত রীতি যা প্রত্যক্ষভাবে করা যায় না, তা পরোক্ষভাবেও করা যায় না। এসব যুক্তিতে রিটটি করা হলে আদালত রুলসহ ইসির প্রতি ওই নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
জামায়াতের প্রাথীরা হলেন ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পারোয়ার, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান।
সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ কক্সাবাজার-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি অন্য কোনো প্রার্থী দেয়নি। এ ছাড়া জামায়াতের নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, জহিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৬ এবং ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান পাবনা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।
এফএইচ/এসআর/আরএস/এসএইচএস/আরআইপি