মতামত

শুভ বড়দিন : ওই মহামানব আসে

জেরুজালেমের দক্ষিণে ছোট একটি শহর বেথেলহেম। প্রায় দুহাজার বছর আগে এই ছোট শহরের প্রান্তে একটি গোশালায় যে আলোকোজ্জ্বল শিশুর জন্ম হয়েছিল তিনি পরবর্তীতে মানবজাতিকে দেখিয়েছিলেন ক্ষমা ও মুক্তির পথ। মহামানব যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনকে ঘিরে পঁচিশে ডিসেম্বর সারা বিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করেন ক্রিসমাস বা বড়দিন। সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব বড়দিন পালিত হচ্ছে প্রার্থনা, উপহার, আনন্দ ও সম্মিলনের মধ্য দিয়ে।

Advertisement

ক্রিসমাস ধর্মীয় উৎসব তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রিসমাস এখন সামাজিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো পাশ্চাত্য সভ্যতার কেন্দ্রগুলোতে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে ছুটি, কেনাকাটা, ঘর সাজানো, ক্রিসমাস ট্রি, সান্টা ক্লজ সব মিলিয়ে যে উৎসবের সমারোহ দেখা যায় তা আর শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসকারী অন্য সম্প্রদায়ের মানুষরা ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে প্রার্থনা করা বা চার্চে যান না নিশ্চয়ই। তবে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে ঘর সাজানো, লাল-সবুজ-সাদা রঙের নানা রকম ডেকোরেশন পিস ব্যবহার, উপহার লেনদেন এগুলো সব সম্প্রদায়ের মানুষই বেশ উৎসাহের সঙ্গে উদযাপন করেন। বিশেষ করে ক্রিসমাস ও নতুন বছর খুব কাছাকাছি বলে সিজন’স গ্রিটিংস, বা ফেস্টিভ্যাল সিজন হিসেবে তারা এই উৎসবকে পালন করেন।

বস্তুত ক্রিসমাস এখন বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ। চীনেও দেখছি ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বেশ উৎসবের আমেজ চারিদিকে। দোকানে দোকানে মূল্যছাড় চলছে। বিভিন্ন শপিংমলে, কেকের দোকানে, খেলনার দোকানে, হোটেলে শোভা পাচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি, রেইন ডিয়ার, স্নোম্যান ও সান্টা ক্লজ।

Advertisement

নববর্ষ উপলক্ষ্যে চলছে কেনাকাটা ও উৎসব। প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে ক্রিসমাস সামগ্রী। বলতে গেলে ধুমিয়ে কেনাকাটা করছে জনগণ। অবশ্য চাইনিজ নিউইয়ার বা বসন্ত উৎসব পালিত হবে ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু পহেলা জানুয়ারিতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসবও কম নেই। এসব দেখেশুনে নিজের ভিতরও ভালোলাগার আমেজ তৈরি হয়। মানুষ আসলে শান্তিপ্রিয়। উৎসব, অনুষ্ঠান, শান্তি সকলেই ভালোবাসে। আমি নিজেও ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে ঘর সাজিয়েছি বেশ উৎসাহের সঙ্গে।

বাংলাদেশে ক্রিসমাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন একটা সময়ে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে। বেশ গরম হাওয়া। হাওয়া গরম হলে সমস্যা নেই, কিন্তু সমস্যা হলো যখন এই উপলক্ষ্যে শুরু হয় কাদা ছিটানো। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই চোখে পড়ছে দলাদলি আর বিদ্বেষমূলক মন্তব্য।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক বিভিন্ন গুণ্ডাপাণ্ডার দলও বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী সভাসমিতিতে হামলা, সহিংসতার খবরও চোখে পড়ছে। এগুলো কোনভাবেই অভিপ্রেত নয়। সমাজে দলাদলি, হিংসা, বিদ্বেষ কখনও কারও কাম্য হতে পারে না।

মহামানব যিশুখ্রিস্টের জীবন ও আদর্শ বিশ্বের জন্য ক্ষমা, সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও অহিংসতার বাণী প্রচার করে। শত্রুকেও ক্ষমা করাই এই মহামানবের আদর্শ। ক্রিসমাস সারা বিশ্বের জন্য বয়ে আনে আনন্দ, ভালোবাসা, উদারতা ও সম্প্রীতির আহ্বান। অন্যকে উপহার দেওয়ার মধ্যে রয়েছে ক্রিসমাসের আনন্দ। নিজের স্বার্থত্যাগ করে অপরের সেবায় জীবন উৎসর্গ করাই ক্রিসমাসের মূল প্রেরণা।

Advertisement

বাংলাদেশের সমাজে শান্তির এই সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক এই কামনা প্রতিটি সুনাগরিকের। নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ। কিন্তু সেই নির্বাচনী পরিবেশ যেন শান্তিপূর্ণ হয়। সহিংসতা যেন দূর হয়। ‘আমি তোমার সঙ্গে একমত নই। কিন্তু তোমার মত প্রকাশের অধিকারের জন্য আমি জীবন দিতে পারি’-এটাই গণতন্ত্রের আদর্শ।

গণতন্ত্রের এই আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হবে এবং দেশের সর্বত্র এই আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে তবেই না নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত চিত্রটাই যেন সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রার্থীরা সব সভ্যতা, ভব্যতা ও শালীনতা ভুলে পরস্পরের প্রতি ছুঁড়ে দিচ্ছেন কদর্য ভাষা ও বক্তব্য।

প্রার্থীদের চেয়েও এককাঠি সরেশ সমর্থকরা বা তাদের চামচারা। মাঝখান থেকে নেপোয় মারছে দই। এলাকার মাস্তানদের কদর গেছে বেড়ে। বিরোধিতা করুন কিন্তু শালীনতাকে অতিক্রম করা কখনও কাম্য নয়।

বড়দিনের মহান প্রেরণা ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সর্বত্র। শান্তি ও সম্প্রীতির সুবাতাস বয়ে যাক। বড়দিনে এটাই প্রার্থনা।

লেখক : কবি, সাংবাদিক। বর্তমানে চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

এইচআর/জেআইএম