উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা তিনজনের প্রার্থিতা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আটকে গেছে। এ ছাড়া মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের ওপর ‘নো অর্ডার’ আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
Advertisement
সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিকে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক এবং বগুড়ায় গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
Advertisement
ফলে ঢাকা-২০ আসনে বিএনপির প্রার্থী ধামরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতা, বগুড়া-৩ আসনের প্রার্থী আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোহিত তালুকদার, বগুড়া-৭ আসনের প্রার্থী শাহজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল ও গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন এবং ঢাকা-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না।
ঢাকা-১ আসনে প্রার্থীশূন্য ধানের শীষ
ঢাকা-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের (ধানের শীষ) মনোনয়ন পত্রের বৈধতা দেয়া নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে রুলও জারি করেন হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত এ বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শামীম আহমেদ মেহেদী ও ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম।
Advertisement
এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার আগেই তিনি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। যদিও নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্রের বৈধতা দিয়েছিল। এ বিষয়ে ওই আসনের কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বিকল্প ধারার জালাল উদ্দিনের করা রিট শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করা হয়।’
ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘কমিশনের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত হওয়ায় তিনি আর আপাতত নির্বাচন করতে পারছেন না।’
ঢাকা-১ আসনে প্রতীক পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সালমান এফ রহমান (নৌকা), বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলনের কামাল হোসেন (হাতপাখা), বিকল্পধারার জালাল উদ্দিন (কুলা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) আবিদ হোসেন (কাস্তে), জাকের পার্টির সামসুদ্দিন আহমদ (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সিকান্দার হোসেন (কোদাল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলাম (মোটরসাইকেল)।
ঢাকা-২০ আসন
ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে তমিজ উদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণের আগেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। রির্টার্নিং কর্মকর্তা ২ ডিসেম্বর তা বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ইসি ৬ ডিসেম্বর আপিল মঞ্জুর করে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করে। পরে এর বিরুদ্ধে রিট করেন ওই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেনজীর আহমেদ। ১১ ডিসেম্বর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে তমিজ উদ্দিনের আবেদনের পর ১২ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।
মানিকগঞ্জ-৩ আসন
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশের ওপর ‘নো অর্ডার’আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে তিনি আর নির্বাচন করতে পারছেন না।
প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে সোনালী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী আকতার হামিদ। অপরদিকে রিতার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
ঋণ খেলাপের অভিযোগ এনে আফরোজা খান রিতার বিরুদ্ধে রিট করে সোনালী ব্যাংক। ১২ ডিসেম্বর এ রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মনোনয়নপত্র বৈধতার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এতে তার ভোটের পথ আটকে যায়। এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন।
বাবা সাবেক মন্ত্রী হারুনুর রশীদ খান মুন্নু মারা যাওয়ায় এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন আফরোজা খান রিতা। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
বগুড়া ৩ ও ৭ আসন
উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করায় বগুড়া-৩ আসনে আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মোহিত তালুকদার ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের বিএনপির প্রার্থী শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদলের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট ৯ ডিসেম্বর পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। সোমবার পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ চলমান রেখেছেন।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করায় ‘জিয়া পরিবারের আসন’হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে বিএনপির আরেক প্রার্থী মোরশেদ মিলটনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
ফলে ওই আসনেই ধানের শীষের প্রার্থী মোরশেদ মিলটনের প্রার্থিতা আর থাকলো না বলেও জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী সেলিনা আক্তার। একইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।এর আগে ‘জিয়া পরিবারের আসন’হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে নির্বাচন করতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছিলেন গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ মিলটন।
দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার ‘বিকল্প’প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী মোরশেদ মিলটনের মনোনয়ন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে পরের দিন শুনানি শেষে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভিটা বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘বিকল্প’প্রার্থী হতে গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মিলটন।
২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ের দিনে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও মনোনয়ন বাতিল করা হয়। ফলে আসনটিতে বিএনপিপ্রার্থী শূন্য হয়।
তার পদত্যাগ সঠিকভাবে হয়নি দাবি তুলে এই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খানের পক্ষে আইনজীবী সেলিনা আক্তার। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন। রিটে বলা হয়, বিএনপির প্রার্থী গাবতলীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটনের পদত্যাগ নিয়ম অনুযায়ী হয়নি এবং ১৯৯৮ সালের উপজেলা পরিষদ আইন ১২ এর (১)(২) পরিপন্থী।
এ আসনের ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পাঁচ দফায় প্রার্থী ছিলেন খালেদা জিয়া। তবে প্রতিবারই তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচন হয়েছে।
এনডিএস/আরআইপি