জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে (মতিঝিল, রমনা, শাহবাগ ও পল্টন) দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
Advertisement
ইতোমধ্যে এই দুই প্রার্থী ভোটার টানতে নেমে পড়েছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। ঢাকা-৮ থেকে টানা তিনবার (হ্যাটট্রিক) সংসদ সদস্য হওয়ার আশায় প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই প্রচারণায় নেমে পড়েন মেনন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর দুইদিন কিছুটা নীরব থাকলেও ঢাকা-৮ থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আশায় বুধবার থেকে প্রচারণায় সক্রিয় হয়েছেন আব্বাস।
ঢাকার এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারে নামলেও আব্বাসের তুলনায় প্রচার ও পোস্টারের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে মেনন। এই আসনটির বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই নৌকা প্রতীক নিয়ে রাশেদ খান মেননের সাদা-কালো পোস্টার ঝুলছে। তবে মির্জা আব্বাসের ধানের শীর্ষের পোস্টার কোথাও চোখে পড়েনি।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে ঢাকা-৮ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন মেনন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে ৩০ হাজার ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ এই নেতা।
Advertisement
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবারই ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির এই নেতা। তার আগে তিনি ১৯৯১ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ইতোমধ্যে ঢাকার মেয়র ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবারই প্রথম ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আব্বাস।
হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থী এবার একই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জমজমাট লড়াই হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এই সংসদীয় আসনের ভিতরে থাকা শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, রাজারবাগ, মতিঝিল, পল্টন, বঙ্গবাজার ও শাহবাগের বিভিন্ন অঞ্চল বুধবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন জাগো নিউজের এই প্রতিবেদক।
এসব অঞ্চলের কমপক্ষে ১০০ জনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। এদের কেউ কেউ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মেননের একচেটিয়া জয়ের আশা ব্যক্ত করেন। আবার অন্য একটি অংশ আশাবাদ ব্যক্ত করেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মির্জা আব্বাস বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস করবেন। তবে বেশিরভাগ মতামত দেন নৌকা ও ধানের শীর্ষের প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
এদিকে প্রত্যেকটি এলাকায় রাশেদ খান মেননের পক্ষে নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্টার ঝুলতে দেখা গেছে। তবে মির্জা আব্বাসের পক্ষে কোনো পোস্টারের দেখা মেলেনি। এমনকি আব্বাসের নিজস্ব এলাকা হিসেবে পরিচিত রাজারবাগ-শাহজাদপুরেও ধানের শীর্ষের কোনো পোস্টার ঝুলতে দেখা যায়নি।
Advertisement
খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে এবং শাহজাদপুরের রাস্তা দেখা যায় নৌকা ও রাশেদ খান মেননের ছবি সম্বলিত সাদা-কালো পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এলাকাটিতে কথা হয় মো. মিলন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, পোস্টার দিয়েই সবকিছু হবে না। এ এলাকার ভোট মির্জা আব্বাসের। তবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় রাশেদ খান মেনন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ভোট পাবেন। তারপরও আব্বাসই এগিয়ে থাকবেন।
নৌকা ও রাশেদ খান মেননের ছবি সম্বলিত সাদা-কালো পোস্টার শান্তিনগরের বিভিন্ন রাস্তায় ঝুলতে দেখা গেছে। শান্তিনগরের বাসিন্দা কায়েস বলেন, শান্তিনগর আওয়ামী লীগ ও মেননের ঘাঁটি। এ এলাকার ভোট একচেটিয়া নৌকায় পড়বে।
বিকেল সাড়ে ৩টিার দিকে মতিঝিলের রাস্তায় নৌকার পক্ষে শতাধিক মানুষের একটি মিছিল বের হয়। জহির আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে শ্রমিকলীগ এই মিছিল বের করে। মিছিলটিতে অংশ নেয়া টুটুল নামের একজন বলেন, কে নির্বাচন করছে সেটা বড় কথা নয়, ভোট হবে প্রতীক দেখে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ঢাকা-৮ আসনের ভোটাররা এবারও নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
এর আগে সকালের দিকে মতিঝিল অঞ্চলে বড়সড় একটা নির্বাচনী শোডাউন করেন বিএনপির মির্জা আব্বাস। ওই শোডাউনে থাকা রাকিব নামের একজন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাই। ঢাকা-৮ এর ভোটাররাও এর ব্যতীক্রম না। আর মির্জা আব্বাস আমাদের দলের লোক। আমাদের নেতা অন্যদলের প্রতীক হায়ার করে নির্বাচন করছেন না। এবার ঢাকা-৮ থেকে মির্জা আব্বাসের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না।
নির্বাচনী এলাকায় কোনো পোস্টার না থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পোস্টার দেখে এবার ভোট হবে না। তারপরও আমরা পোস্টার ঝুলাব। আগামী সপ্তাহ থেকেই ধানের শীষ নিয়ে ভাইয়ের (মির্জা আব্বাস) পোস্টার ঝুলতে দেখবেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য গত ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর পরই ওইদিন মহাজোটের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন গণসংযোগে নেমে পড়েন। বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে শুরু হওয়া ওই গণসংযোগে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নৌকায় ভোট চান মেনন। এরপর পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে মতিঝিল, শাহজাহানপুর, শাহবাগ, রমনা থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি। এরপর আওয়ামী মহিলা লীগের উদ্যোগে পুরানো রমনা থানার সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে বেইলি রোড প্রদক্ষিণ করেন।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী মির্জা আব্বাস আনুষ্ঠানিক প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর ওইদিনই কোনো গণসংযোগ না চালালেও শাহজাহানপুরের নিজ বাসায় দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেন। ওই দোয়া ও মিলাদে আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, আমাকে আটকানোর জন্য ঢাকা-৬ আসনকে ভাগ করে ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ করা হয়েছে। আসন ভাগ করলেও আমাকে এবং আমার ভোটারদের ভাগ করা যাবে না।
এমএএস/জেএইচ/আরআইপি