বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ। ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সরকারি বাসভবন। ১৭০৩ সালের দিকে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এরপর ১৭৬১ সালে রাজা তৃতীয় জর্জের সময় ও পরবর্তীতে ১৯ শতকে এটির বিস্তৃতি ঘটে। প্রায় সাড়ে ৮ লাখ বর্গফুটের এই প্রাসাদে মোট ৭৭৫টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে বিলাসবহুল শৌচাগার রয়েছে ৮০টি।
Advertisement
সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই প্রাসাদে থাকেন। বছরে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি এই প্রাসাদে আসেন। রানির নিজস্ব পছন্দের গ্যালারিতে রয়েছে সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রায় ৪৫০টি ছবি। ৪০ একর খেলার মাঠও রয়েছে এই প্রাসাদ সংলগ্ন এলাকায়।
উইন্ডসর ক্যাসল। লন্ডনের পশ্চিমে অবস্থিত ১১০০ শতকের এই প্রাসাদটি। সপ্তাহের বেশির ভাগ সময়ই রানি এলিজাবেথ থাকেন এই ১০০০ ঘর বিশিষ্ট প্রাসাদে, বিশেষ করে ইস্টারের সময়। বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা (রুবেনস, ক্যানালেত্তো) বিরল ছবি রয়েছে এই প্রাসাদে। রয়েছে প্রাচীন আমলের বিরল আসবাবপত্রও, যেমন দ্বিতীয় চার্লসের খাট। মধ্যযুগের সেন্ট জর্জ চ্যাপেল ও হল রয়েছে এখানেই।
রানির সঙ্গে এই প্রাসাদে বিশ্বের রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠক হয়েছে অনেক বার। প্রায় ৫ লক্ষ বর্গফুটের এই প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। ১৯৯২ সালে আগুন লাগার পর এই প্রাসাদ মেরামত করতে ২৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
Advertisement
হোলিরুড হাউস। ১৬০০ শতকে স্কটল্যান্ডের রাজা-রানিরা থাকতেন এই প্রাসাদে। আরও আগে ১১২৮ সালে এটি ছিল একটি মনাস্ট্রি। স্কটল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জেমস এটি তৈরি করেন। পরে ইংল্যান্ডের রাজা রানিরা এটির দেখভাল করতেন। স্কটল্যান্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই প্রাসাদ।
স্কটল্যান্ডে রানির অফিসিয়াল কাজকর্মও হয় এই প্রাসাদ থেকেই। তাদের ব্যক্তিগত থাকার জায়গা, আর্ট গ্যালারি খুলে দেয়া হয় দর্শকদের জন্য। স্কটল্যান্ডের প্রায় ১০০ জন শাসকের ছবি রয়েছে গ্যালারিতে। প্রায় ৮৬ কোটি টাকা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ হয়েছে এই প্রাসাদে।
স্কট-বারোনিয়াল স্টাইলের এই বালমোরাল প্রাসাদটি প্রায় ৫০ হাজার একর জমির উপর তৈরি। প্রাচীন ক্যালিডোনিয়ান স্টাইলে তৈরি। প্রাসাদ লাগোয়া বেশ কিছু প্রাচীন বাংলো রয়েছে। এটি একেবারে রানির নিজস্ব সম্পত্তি।
বালমোরাল প্রাসাদে সাধারণত রানি এলিজাবেথ থাকেন অাগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ। এটিও দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয় গ্রীষ্মকালে।
Advertisement
স্যান্ডরিংহ্যাম প্রাসাদ প্রায় ২০ হাজার একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ১৮৬২ সালে রানি ভিক্টোরিয়া এটি নিজের ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ডের জন্য ক্রয় করেন। বড়দিন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রানি এলিজাবেথ থাকেন এই প্রাসাদেই। জনগণের উদ্দেশে বলা তার বেশিরভাগ বার্তাই এই বাড়ি থেকে রেকর্ড হয়।
এই প্রাসাদকে বলা হয় ইংল্যান্ডের সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গা। এটি ইংল্যান্ডের প্রথম কয়েকটি বাড়ির অন্যতম যেখানে প্রথমবার ফ্লাশিং টয়লেট, শাওয়ার বাথ, গ্যাস লাইটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। ১৮৭০ সাল লাগাদ পুনর্নির্মাণ করা হয় এটি।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের লিসবার্নের কাছে এই প্রাসাদে রানি সবচেয়ে কম দিন থেকেছেন। ১৮ শতকের শেষের দিকে এই হিলসবোরো প্রাসাদ তৈরি করেন উইলস হিল। দু’একর জমির উপর তৈরি এই দোতলা জর্জিয়ান ম্যানসনটি।
১৯২২ সালে আয়ারল্যান্ড গঠনের পর ব্রিটিশ সরকাররকে হিলসবোরো প্রাসাদ বিক্রি করতে হয়। এর ডাইনিং হলে ৩২ জন অতিথি এক সঙ্গে বসতে পারেন। ১৯৮৫ সালে অ্যাংলো-আইরিশ চুক্তিও হয় এই হিলসবোরো প্রাসাদে। এটি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় এপ্রিল, মে, জুন ও সেপ্টেম্বর মাসে। এই প্রাসাদের বাগান, সমাধিক্ষেত্র, উডল্যান্ড দেখলে চোখ ফেরানো যায় না।
১৭০০ শতকের কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের বর্তমান বাসিন্দা কেমব্রিজের ডিউক ও ডাচেস প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী কেট। প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন ডলার (৩৩ কোটি টাকা) খরচ করে ১৯টি ঘরের স্যুটের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।
রানির বোন মার্গারেট প্রথম দিকে এই বাড়িতে থাকতেন। ১৮ শতকের আমলের বাগান রয়েছে এখানে। এই প্রাসাদেই নৈশভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। ছবি ও আসবাবপত্র ছাড়াও প্রিন্সেস ডায়ানার পোশাকের প্রদর্শনী দর্শকের কাছে এই প্রাসাদের অন্যতম আকর্ষণ। আনন্দবাজার।
এসআইএস/আরআইপি