মালয়েশিয়ার টপগ্লাভ ও ডব্লিউআরপি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, কারখানাতে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। সপ্তাহে সাতদিনই কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। পুরো মাসে শুধু একদিন তারা ছুটি পান।
Advertisement
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারখানাতে শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রমদান, বাধ্যতামূলক ওভারটাইম, ঋণের জালে আটকানো, বেতন বকেয়া রাখা এবং পাসপোর্ট জব্দ করে রাখার মতো কাজ করা হয়। বিদেশি শ্রমিক নির্যাতনকারী মালয়েশীয় কারখানার তৈরি হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করছে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস।
এই কারখানাগুলোতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক বাংলাদেশ ও নেপালের। বলা হয়েছে, এ দুটি মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান এনএইচএসে রাবার গ্লাভস সরবরাহ করে। টপগ্লাভ ও ডব্লিউআরপি নামের ওই দুই প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ও নেপালি শ্রমিক কাজ করে। যাদেরকে শোষণমূলক পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টপ গ্লাভ মালয়েশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। আর ৪০টি কারখানা ও সহযোগী উৎপাদনকারী নিয়ে কাজ করা ডব্লিউআরপি বিভিন্ন ব্রান্ডের জন্য গ্লাভস উৎপাদন করে এবং এনএইচএসে গ্লাভস সরবরাহ করে।
Advertisement
এনএইচএসের হাসপাতাল ও যুক্তরাজ্যের ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রির ৪০ শতাংশ শেয়ার আছে প্রতিষ্ঠানটির। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে টপ গ্লাভের ১৬ শ্রমিক এবং ডব্লিউআরপির তিন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশের ও আটজন নেপালের।
ডব্লিউআরপির প্রধান নির্বাহী লি সন হং বিবৃতিতে সব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান রোববার বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
শ্রমিকরা জানিয়েছে, কারখানাতে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাদেরকে সপ্তাহ সাতদিনই কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। পুরো মাসে শুধু একদিন তারা ছুটি পান। তাদের পরিহিত শার্টে টপ গ্লাভের লোগো রয়েছে যেখানে লেখা-‘সৎ থাকুন এবং কোনো প্রতারণা নয়।’
১৬ শ্রমিকের প্রত্যেকেই অভিযোগ করেছেন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছে এবং অনুরোধ সত্ত্বেও তারা পাসপোর্ট ফেরত পাননি।
Advertisement
টপ গ্লাভে শ্রমিকদের বেতন রশিদে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিকদের মূল বেতন ১ হাজার রিঙ্গিত (মালয়েশীয় মুদ্রা)। অথচ মালয়েশিয়ায় মধ্যম মানের মজুরি দুই হাজার ১৬০ রিঙ্গিত। চুক্তিতে উল্লেখ থাকার পরও শুধু রোববার কাজ করায় তাদের দ্বিগুণ ওভারটাইম দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও অনেক বেশি। কিছু শ্রমিক অভিযোগ করেছে তাদেরকে প্রতিদিন ১৫ হাজার গ্লাভস মোড়কজাত করতে হয়। আরেক শ্রমিক অভিযোগ করেছে, বিগত বছরের তুলনায় তার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করতে পারলে বেতন কাটা হয় বলেও অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা।
শ্রমিক নির্যাতনের একই চিত্র দেখা গেছে, ডব্লিউআরপিতে। অতিরিক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে বেতন আটকে রাখার অভিযোগও পাওয়া গেছে।প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদেরকে কারখানার ভেতরে আটকে রাখা হয়। শুধু রোববার তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেপালি শ্রমিক বলেছেন, ‘তিন মাস হয়ে গেছে আমাদের বেতন দেওয়া হয়নি; এটা বেশ কঠিন। আমার পরিবারের অর্থের প্রয়োজন কিন্তু আমি তাদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারছি না। আমার কারখানা কোথায় তারা জানতে চাইছে।’
এক সম্ভাব্য ক্রেতা ডব্লিউআরপির কারখানা ঘুরে আসার পর বলেছেন, কারখানার ভেতরে প্রবেশের পর সেখানকার পরিবেশ দেখে তিনি মর্মাহত হয়েছেন। এত বাজে কর্মপরিবেশ তিনি কোথাও দেখেননি। কারখানার ভেতরে তাপমাত্র ৭০ সেন্টিগ্রেড এবং ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক ধারণক্ষম হোস্টেলে রাখা হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিককে।
তবে, টপ গ্লাভ ও ডব্লিউআরপি উভয় প্রতিষ্ঠানই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার কথা স্বীকার করলেও অন্যান্য অভিগোগের প্রসঙ্গে টপ গ্লাভ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের নিশ্চিত করছি সমস্ত অভিযোগের কোনো অস্তিত্বই নেই এবং আমাদের সুনাম নষ্ট করতে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।’
ডব্লিউআরপির প্রধান নির্বাহী লি সন হং বিবৃতিতে সব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন। বেতন বকেয়া রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মজুরি আটকে রাখা এবং তিন মাসে একবার মজুরি দেয়ার অভিযোগে আমরা হতবাক, যেখানে মালয়েশিয়ান চাকরি বিধি অনুযায়ী আমরা প্রতি মাসে বেতন দিচ্ছি।’ ‘সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম ব্যতীত কোনো শ্রমিককে কখনোই ১২ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়নি।’
এএসএস/এমআরএম/এমকেএইচ