শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ বাস্তবায়নে অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্তের জন্য বৈঠকে বসেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যরা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবির অন্যতম ‘গভর্নিং বডির সদস্যদের একযোগে পদত্যাগের’ বিষয়েও আলোচনা হবে বৈঠকে।
Advertisement
বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টায় এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বসার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার। তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ বাস্তবায়নে আমরা বৈঠকে বসছি। বৈঠক থেকে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।'
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির একটি স্কুলের গভর্নিং বডির সব সদস্যের পদত্যাগ। এই দাবির বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমি এ বিষয়ে বডির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। গভর্নিং বডির পদত্যাগে স্কুল যেন শূন্য না হয় সে বিষয়ে আলোচনা করব।
অরিত্রির মৃত্যুর দায় কার? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক কেউ দায়মুক্ত নয়।
Advertisement
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে আত্মহত্যায় প্ররোচণাকারী হিসেবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার শিফট ইনচার্জ জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার সচিবালয়ে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই তিনজনকে আমরা বরখাস্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গভর্নিং বডিকে নির্দেশ দিচ্ছি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ ও বরখাস্তের কাজটি করে গভর্নিং বডি, আমরা সরাসরি করতে পারি না।’
অপরদিকে এই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে অরিত্রির আত্মহত্যার প্ররোচণাকারী হিসেবে ‘প্রমাণিত’ হওয়ায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে র্যাব ও পুলিশকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে আজও সড়কে অবস্থান নেয় রাজধানীর ভিকারুননিসার মেয়েরা। বুধবার বেলা ৩টার দিকে তারা সড়কে অবস্থান নেয়।
Advertisement
গত ৩ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিত্রি অধিকারী।
অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তারা বাবা দিলীপ অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গত রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি দেয়ার) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এ অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।'
এআর/জেডএ/পিআর/এমএস