আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসাররা মূলত সৎ মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।
Advertisement
মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে এনে বৈঠক করে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপিসহ বিরোধীদলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গণহারে বাতিল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্রে অসংখ্য ত্রুটি থাকার পরেও সেগুলোকে বাতিল করা হয়নি। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার তথ্য গোপনের অভিযোগ থাকার পরেও সরকারি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিটার্নিং অফিসার হায়াত উদ দৌলা খানের কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রমে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া কোনো প্রার্থীকে কথা বলার সুযোগ দেননি তিনি। বিএনপির মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া বেশিরভাগ প্রার্থীদেরকেই কথা বলতে দেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রিটার্নিং অফিসার।’
Advertisement
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির বিধান হচ্ছে- প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে চাইলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই প্রার্থীকে থামিয়ে দেন, তাহলে বুঝতে হবে রিটার্নিং অফিসার দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছেন। এভাবে সারাদেশেই রিটার্নিং অফিসাররা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও দেশব্যাপী গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের আগ্রাসী তৎপরতা ও দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার অভিযান ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনেরই ছবি দেখতে পাচ্ছে মানুষ। যেন পাতানো কিছু একটা করতে যাচ্ছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। তবে এবারের নির্বাচন নিয়ে জনবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলে এই অবৈধ আধিপত্য অভিলাষী সরকার নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনবে। ভোটারদের বঞ্চিত করে ভাগ্নে শাহজাদাদের বিজয়ী করার নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘হাইকোর্টে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আমানউল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন নাকচ হওয়ার দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন- কারও দণ্ড হলে আপিল বিচারাধীন থাকলেই চলবে না, এমনকি আপিলে মুক্তি পেলেও নিস্তার নেই। কারণ সংবিধান অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তিকে মুক্তি লাভের পরও ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে যোগ্য হবেন। এখন আমাদের প্রশ্ন- অ্যাটর্নি জেনারেলের এই ব্যাখা যদি বিবেচনায় নেয়া হয় তাহলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এবং কক্সবাজারের সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সংসদ সদস্য পদ কি অবৈধ নয়?’
তিনি বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সংবিধান ও আইনের ব্যাখা দেন সরকার প্রধানকে খুশি করার জন্য। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আমলে ২০০৭-০৮ সালে ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিএনপির যে নেতারা দণ্ডিত হয়েছিলেন তাদের আপিল বিচারাধীন থাকলেও তাদের সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। অথচ ওই ক্যাঙ্গারু কোর্টে দণ্ডিত ও সাজা স্থগিত না থাকা অবস্থায় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ম খ আলমগীর। ১৩ বছরের সাজা নিয়ে শুধুমাত্র আপিল করে এখনও এমপি হিসেবে বহাল আছেন হাজি সেলিম। তার মনোনয়নপত্রও বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের স্বার্থে আইন এক ধরনের ও বিএনপির ক্ষেত্রে আইন আরেক ধরনের। অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যাখাও একই রকম। আদালত প্রাঙ্গণে রাসপুতিনের (রুশ সন্ন্যাসী) ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বিরোধীদলশূন্য করতে সরকারের এজেন্ডা এখন অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে ভয় দেখিয়ে বাস্তবায়ন করছেন।’
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে বিএনিপ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সহ দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমবিআর/এমকেএইচ