আন্তর্জাতিক

রাখাইনে রোহিঙ্গা ফেরানোর বিরোধিতায় উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বিরোধিতা করে মিয়ানমারের রাখাইনে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। রাখাইনের রাজধানী সিত্তেতে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে শতাধিক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অংশ নেয়। এসময় তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পলায়নপর শরণার্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, বিক্ষোভের সময় অনেকের হাতে লাল ব্যানার দেখা যায় এবং তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধীতা করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই বিক্ষোভ সরাসরি সম্প্রচারের সময় এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য সব মানুষের দায় রয়েছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বাঙালিদের গ্রহণ করি তাহলে তা আমাদের এবং দেশের জন্য কোনো লাভ বয়ে আনবে না।’ মিয়ানমারের বৌদ্ধরা দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সেদেশে পাড়ি জমানো অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করে।

আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত 

গত বছরের আগস্টে দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল ১৫ নভেম্বর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। এর প্রায় দশদিন পর রাখাইনের উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বিরোধীতা করে বিক্ষোভ করলো। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। রাখাইনে নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

Advertisement

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বেসামরিক বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, বাড়িঘরে আগুন ও গণধর্ষণ করছে। জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের উদ্দেশে এই অভিযান পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ করেছে।

আরও পড়ুন : বিমান চুরি করল দুই কিশোর! 

তবে মিয়ানমার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। গত অক্টোবরের শেষের দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর মতো নিরাপদ পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি দাবি করে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাসহ দাতা সংস্থাগুলো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় গত ১৫ নভেম্বর থেকে ২ হাজার ২০০ রোহিঙ্গাকে রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রথম ধাপের তৈরি তালিকার রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার, নাগরিকত্ব, নিজ গ্রামে ফেরা ও জমির মালিকানা ফিরে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত রাখাইনে ফিরবে না বলে দাবি জানায়।

Advertisement

রোহিঙ্গাদের যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত দাবি মেনে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে গত সপ্তাহে মিয়ানমারের প্রতি চাপপ্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের শরণার্থীবিষয়ক ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম। বাতাংসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, এসব ছাড়া কেউ রাখাইনে ফিরতে রাজি হবে বলে আমার মনে হয় না।

সূত্র : এএফপি, রয়টার্স।

এসআইএস/আরআইপি