ব্যাটিংয়ে তিন হাজার রান হয়েছে অনেক আগেই, অপেক্ষা ছিলো বল হাতে দুইশ উইকেট হওয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এ মাইলফলক স্পর্শ করে অলরাউন্ডারদের বিশ্বরেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
Advertisement
ক্রিকেট বিশ্বে ৩০০০ রান ও ২০০ উইকেট ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে এ রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। পেছনে ফেলেছেন স্যার ইয়ান বোথাম, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, স্যার গ্যারি সোবার্স, জ্যাক ক্যালিসদের মতো কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদের।
ইনজুরি কাটিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরাটা দারুণভাবে সাজিয়েছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। চার মাস পরে টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে বোলিং করতে এসে নিজের প্রথম বলেই নিয়েছিলেন উইকেট, প্রথম ওভারে নেন আরও একটি। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিম ক্যাচ না ছাড়লে এক ওভারেই তিন উইকেট হয়ে যেত সাকিবের। পরে ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে ক্যাচ ছাড়েন মোস্তাফিজুর রহমান। না হলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুইশ উইকেট হয়ে যেত সাকিবের।
তখন না হওয়া দুইশ উইকেট, হয়নি পুরো ইনিংসেই। সাকিবের জোড়া উইকেটের পর ক্যারিবীয় ইনিংসে চলে অভিষিক্ত নাঈম হাসানের অফ স্পিন ভেলকি। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। একটি উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
Advertisement
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করে দেয়ার পথে ইনিংসের একদম শেষ উইকেটটি নেন সাকিব। ১৯৬ উইকেট নিয়ে খেলা শুরু করে তার উইকেট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৯। দুইশ উইকেটের অপেক্ষা বেড়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংস পর্যন্ত।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসে অপেক্ষাটা খুব বেশি দীর্ঘ হতে দেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম উইকেটের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের ৭২তম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুইশ উইকেট নেয়ার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। ২০০৭ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়া সাকিবের দুই উইকেট নিতে বোলিং করতে হয়েছে ৫৪টি টেস্টের ৯০ ইনিংসে। ১৮ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট ও দুইবার ম্যাচে দশ উইকেট নিয়ে এ মাইলফলকে প্রবেশ করেছেন সাকিব।
২০১০ সালে ক্যারিয়ারের ১৫তম টেস্টে ৫০ উইকেটের মাইলফলকে প্রবেশ করেছিলেন সাকিব। বছর দুয়েকের মধ্যেই ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুলনায় নিজের ২৮তম টেস্টে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ১০০ উইকেট নেন তিনি। একশ থেকে দেড়শ'তে পৌঁছতে কেটে যায় ৪ বছর। ক্যারিয়ারের ৪২তম টেস্টে ১৫০ উইকেট নেয়ার পর আজ ৫৪তম টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের ৭২তম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুইশ উইকেট নেয়ার মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব।
বোলারদের মধ্যে ৭২তম হলেও অলরাউন্ডার হিসেবে দুইশ উইকেট নিয়ে বেশ উপরের দিকেই রয়েছেন সাকিব। ব্যাট হাতে চট্টগ্রাম টেস্টের পর তার সংগ্রহ ৩৭২৭ রান। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যাট হাতে ৩০০০+ এবং বল হাতে দুইশ উইকেটের ডাবল নেয়া মাত্র ১৪তম ক্রিকেটার তিনি।
Advertisement
তবে এদের মধ্যেও সবার চেয়ে দ্রুততম সাকিব আল হাসান। এতদিন ধরে ৫৫ ম্যাচেই ৩০০০ রান ও দুইশ উইকেটের ডাবল নিয়ে দ্রুততম ছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তী অলরাউন্ডার স্যার ইয়ান বোথাম। তার রেকর্ড ভেঙে মাত্র ৫৪ ম্যাচেই এই কীর্তি ছুঁয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়লেন সাকিব।
৩০০০ রান ও ২০০ উইকেটের ডাবলে দ্রুততম:
সাকিব আল হাসান - ৫৪ ম্যাচ ইয়ান বোথাম - ৫৫ ম্যাচক্রিস কেয়ার্নস - ৫৮ ম্যাচঅ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ - ৬৯ ম্যাচকপিল দেব - ৭৩ ম্যাচইমরান খান - ৭৫ ম্যাচগ্যারি সোবার্স - ৮০ ম্যাচরিচার্ড হ্যাডলি - ৮৩ ম্যাচশন পোলক - ৮৭ ম্যাচড্যানিয়েল ভেটোরি - ৮৯ ম্যাচজ্যাক ক্যালিস - ১০২ ম্যাচচামিন্দা ভাস - ১০৮ ম্যাচস্টুয়ার্ট ব্রড - ১২১ ম্যাচশেন ওয়ার্ন - ১৪২ ম্যাচ
বাংলাদেশিদের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট
১/ সাকিব আল হাসান - ২০১* উইকেট২/ মোহাম্মদ রফিক - ১০০ উইকেট৩/ তাইজুল ইসলাম - ৮৮* উইকেট৪/ মাশরাফি বিন মর্তুজা - ৭৮* উইকেট৫/ শাহাদাত হোসেন রাজীব - ৭২* উইকেট
এসএএস/এমএস