তখন দুপুর ২টা। ঘরের মানুষটির আসার কথা। চারদিক সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। ‘আজ বুঝলি তো তোর বাবা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন। কতজন এসেছে দেখ।’ ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে দিতে অঝোরে কাঁদছেন মা মিতাদেবী। ‘আগে তুমি একাই আসতে। কেউ টেরও পেত না। আজ দেখো তোমার আসার প্রতীক্ষায় কতজন।’
Advertisement
বলছিলাম বর্ধমানের ইছলাবাদে ঘোষপাড়ায় শহিদের বাড়ির কথা। রাস্তায় তখন তিলধারণের জায়গা নেই। সিআইএসএফ জওয়ান শহিদ দীনাঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের কফিনবন্দি মরদেহ পৌঁছায় বাড়িতে। সিল করাই ছিল কফিন। স্ত্রী মিতাদেবী, লাল টি-শার্ট পরা একমাত্র ছেলে দেবজিৎ কফিনের ওপর হাত রাখলেন। অনুভব করতে চাইলেন বাবার স্পর্শ। কিন্তু কফিন খোলা হবে শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল দেবজিৎ। কাঁদতে কাঁদতেই চিৎকার করে উঠল, ‘কফিন খোলো বাবার মুখটা দেখব।
শহিদের দেহ নিয়ে আসা সিআইএসএফ জোয়ান জওয়ানরা একে অপরের দিকে চেয়ে আছেন। কিশোরে কান্না আর মিতাদেবীর অনুরোধ, ‘স্বামীকে দেখব, একবার অন্তত কফিনটা খুলুন।’ এরপরই হাতুড়ি, শাবল এনে পেরেক খুলে দিলেন জওয়ানরা। শহিদ দীনাঙ্করের মুখের কাছে হাত রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা-ছেলে। একে একে শাঁখা, পলা, লোহা খুলে স্বামীর কাছে রেখে দিলেন মিতাদেবী।
আরও পড়ুন>> প্রবাসীর লাশ নয়, কফিনে টাকা খোঁজে পরিবার
Advertisement
রজনীগন্ধা ও আকন্দফুলের মালা পরিয়ে দিলেন। গঙ্গাজল, চন্দনকাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিলেন। রেখে দিলেন গীতাও। নামাবলি দিয়ে ঢেকে দিলেন স্বামীর নিস্পন্দ দেহে।
বৃহস্পতিবার ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়ায় মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে নিহত হন সিআইএসএফ জওয়ান দীনাঙ্করবাবু। শুক্রবার বর্ধমানের হাজার হাজার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান শহিদকে।
শুক্রবার সিনিয়র কমান্ডান্ট (সাউথ ইস্টার্ন সেক্টর) শরদ কুমারের নেতৃত্বে একটি দল দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানে আসে। দীনাঙ্করবাবুর বাড়ির অদূরে ইছলাবাদ ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে গার্ড স্যালুট দেয়া হয় সিআইএসএফ-এর তরফে। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারাও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন শহিদকে।
এরপর বর্ধমান শহরেরই নির্মল ঝিলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় নিহত জওয়ানের। সেখানে গান স্যালুট জানানো হয় সিআইএসএফ-এর তরফে। সেখানে হাজির ছিলেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। শহরের লাখো মানুষ ভিড় করেছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
Advertisement
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন/এমআরএম/পিআর