সিলেট টেস্ট নিয়ে অনেক কথা। রাজ্যের সমালোচনা। পরিণতিটা অনেক বেশি হতাশার। তাই সব কিছু ছাপিয়ে জিম্বাবুয়ের কাছে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর টেস্ট পরাজয়ের হতাশাই পোড়াচ্ছে ভক্ত ও সমর্থকদের। মাহমুদউল্লাহ বাহিনীর হার নিয়েই সবচেয়ে বেশি কথাবার্তা এখন। চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা।
Advertisement
ফল নিয়ে হতাশাব্যঞ্জক কথোপকথনের পাশাপাশি বেশি কথা হয়েছে এবং হচ্ছে টাইগারদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ, এপ্লিকেশন ও পারফরম্যান্স নিয়ে। সবার একটাই আক্ষেপ-ওয়ানডে সিরিজের নজর কাড়া ব্যাটিংয়ের পর টেস্টে ব্যাটিংয়ের এমন অনুজ্জ্বল ও হতশ্রী অবস্থা কেন? হোক ভিন্ন ফরম্যাট, তারপরও ঘুরে ফিরে প্রায় একই ব্যাটিং লাইন আপ, তাতে করে অ্যাপ্রোচ, এপ্লিকেশন ও পারফরম্যান্সের এত বিস্তর ফারাক কেন? এমন বাজে ব্যাটিং কি করে হলো?
এর বাইরে আরও দুটি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে । প্রশ্নও উঠছে। যার একটি দল নিয়ে। অন্যটি ব্যাটিং অর্ডার বা ব্যাটসম্যানদের পজিশন নিয়ে। টিম কম্বিনেশন, ক্রিকেটার নির্বাচন নিয়েও বিস্তর কথাবার্তা।
হোক স্লো, লো পিচ। তারপরও একজন মাত্র পেসার নিয়ে নামা কেন? তিন স্পিনার খেলানোর যৌক্তিকতা নিয়েও নানা প্রশ্ন। ওয়ানডে ক্রিকেটে খুব ভালো খেলেছেন, তিন ম্যাচের একটিতে সেঞ্চুরি ও ৮০ ‘র ঘরে রান করেছেন বলেই তাকে টেস্টেও ওপেন করাতে হবে কেন? মুশফিকুর রহীমের মতো দলের সেরা ব্যাটসম্যানকে বা কেন টেস্টে ছয় নম্বরে খেলানো হলো? এসব নিয়েও বিস্তর কথাবার্তা।
Advertisement
এর বাইরে আরও উইকেট নিয়েও কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেশের মাটিতে একটা টেস্ট ভেন্যুর অভিষেক ঐতিহাসিক ঘটনা সত্য। তারপরও সে মাঠের উইকেট কেন স্বাগতিক দলের উপযোগী ছিল না? কিংবা থাকলেও কি কারণে কোচ, টিম ম্যানেজমেন্ট ও অধিনায়ক পিচের চরিত্র বুঝে উঠতে পারেননি। কেন কোচ স্টিভ রোডসের মুখেও উইকেটের আচরণ নিয়ে সংশয় মাখা বক্তব্য?
দ্বিতীয় টেস্ট যত ঘনিয়ে আসছে সিলেট টেস্ট নিয়ে কথাবার্তাও আরও বেশি হচ্ছে। এবং বলা হচ্ছে প্রথম টেস্টে সেই যে উইকেটের চরিত্র ও আচরণ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না নিয়ে ভুল ও অকার্যকর একাদশ নির্বাচন এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটিং অর্ডার সাজানো-এই ‘ভুলের’ সমারোহ কি কমবে ঢাকায়, নাকি বরাবরের ‘রহস্যময়’ ও ‘দূর্বোধ্য’ শেরে বাংলার পিচ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না নিয়ে আবারো তিন স্পিনার নিয়েই মাঠে নামবে টাইগাররা? কার্তিকের একদম শেষ ভাগে (খেলা শুরু হবে ২৭ কার্তিক) কুয়াশা ঢাকা সকালে একজন পেসার খেলানোর মত অদূরদর্শি চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে আবারও?
ভক্ত ও সমর্থকদের মনে এসব কৌতুহলি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। এসব প্রশ্ন জবাব খুঁজতে গিয়েই বেড়িয়ে এসেছে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়। শেরে বাংলার পিচ বরাবরই রহস্যময়, টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ভাষায় ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। কখন কেমন আচরণ করে তা বোঝা ও অনুমান করা কঠিন।
এ সত্য উপলব্ধি থেকেই গত ৪৮ ঘন্টা উইকেট নিয়ে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা। বিসিবির বর্তমান গ্রাউন্স কমিটির চেয়ারম্যান , ঝানু ক্রিকেট সংগঠক এবং সাবেক ক্রিকেটার মাহবুব আনাম, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু গত ৪৮ ঘন্টার একটা উল্লেখযোগ্য সময় শেরে বাংলার পিচের উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে সকাল বিকেল কথা বলেছেন চিফ কিওরেটর গামিনি ডি সিলভার সাথে। আজও সকাল থেকে প্রায় দুপুর অবধি পিচ নিয়ে চিফ কিউরেটরের সাথে প্রধান নির্বাচককে মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।
Advertisement
ভেতরের খবর, উইকেট যাতে স্বাগতিকদের অনুকূলে থাকে আর উইকেটের চরিত্র, গতি-প্রকৃতি বুঝে দল নির্বাচনের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা ও পরিচালনার সমুদয় দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য যে স্ট্যান্ডিং কমিটির, সেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান এবং প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সাথে কথা বলে যা মনে হয়েছে, তারা ভেবে চিন্তে একাদশ সাজানোর চেষ্টায় আছেন। শেরে বাংলার পিচ সম্পর্কে যতটা সম্ভব পরিষ্কার ধারণা নিয়ে কোচ এবং অধিনায়কের মত নিয়েই একাদশ সাজানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
তো কেমন হতে পারে ঢাকা টেস্টের দল? কেউ দল সম্পর্কে আগাম ধারনণা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলেও তিনটি রদ বদলের কথা শোনা যাচ্ছে। প্রথম চিন্তা হলো- এক পেসার তথা তিন স্পেশালিস্ট স্পিনার ফর্মুলা থেকে সরে আসা।
এটা মোটামুটি চূড়ান্ত যে, সিলেট স্টেডিয়ামে এক পেসার খেলানো ছিল চরম ভুল এবং সামগ্রিক পারফরম্যান্স খারাপ হবার পিছনে তিন স্পিনারের সাথে ঐ একজন মাত্র পেসার নিয়ে খেলার চরম মাশুলও গুণতে হয়েছে।
সেই কারণেই শেরে বাংলায় আগামী পরশু ১১ নভেম্বর শনিবার থেকে যে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হতে যাচ্ছে, তাতে তিন স্পিনারের সংখ্যা দুইয়ে নামিয়ে একজনের বদলে দুই পেসার খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
শুধু ভাবাভাবির মধ্যেই নয়, এটা মোটামুটি চূড়ান্ত যে শেষ টেস্টে একজন নয়, খেলবেন দুই জন পেসার। আর তিন স্পিনার থেকে একজন কমিয়েও আনা হবে। বাঁহাতি নাজমুল ইসলাম অপুকে বাইরে আনা হচ্ছে। এই বাঁহাতি স্পিনারের বদলে একজন পেসার বাড়িয়ে আরেক বাঁহাতি মোস্তাফিজুর রহমানকে খেলানোর কথা বার্তা প্রায় চূড়ান্ত। কাটার মাস্টারের ঢাকা টেস্ট খেলা একরকম নিশ্চিত।
জানা গেছে, শেরে বাংলায় পেসারদের ফার্স্ট চয়েজ হলেন মোস্তাফিজ। সিলেটে টেস্ট খেলা আবু জায়েদ রাহির পারফরম্যান্স তেমন আশাব্যঞ্জক ছিল না। তাই তার খেলার সম্ভাবনা কম। তাই ভেতরের খবর, রাহিকে বাদ দেয়ার চিন্তাই চলছে। তাকে বাইরে নিয়ে অভিজ্ঞ ও কুশলী শফিউলের কথাও বিবেচনায় উঠে আসছে।
জাগো নিউজের সাথে আজ বিকেলে শেরে বাংলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মুঠোফোন আলাপে দল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মিনহাজুল আবেদিনের কন্ঠে মিলেছে পরিষ্কার আভাস, তা হলো স্পিনার কোটায় তাইজুল আর অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজই খেলবেন। অপর স্পিনার নাজমুল অপু বাদ। তার জায়গা নেবেন পেসার মোস্তাফিজ।
দ্বিতীয় পেসার এখনো (মানে আজ বিকেলে অনুশীলন চলাকালীন সময় পর্যন্ত) চূড়ান্ত হয়নি। তবে নবীন রাহির খেলার সম্ভাবনা কম। পেস ডিপার্টমেন্টে নতুনত্ব, বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি ধারালো করার চিন্তায় টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা। তাই রাহির বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। সে হিসেবে আরেক তরুণ দ্রুত গতির বোলার খালেদেরও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এই তরুণ ফাস্ট বোলারের অভিষেক হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি সুইং বোলার শফিউলও আছেন বিশেষ বিবেচনায়। রাহির বদলে খালেদ-শফিউলের কেউ একজনের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে, নাজমুল হোসেন শান্ত খেলানো নিয়েও দ্বিধায় টিম ম্যানেজম্যান্ট ও নির্বাচকরা। যেহেতু দুই ওপেনার লিটন-ইমরুলের সাথে তিন নাম্বারে মুমিনুল আছেন, তাই শান্তর ওপরে খেলার জায়গা নেই। সিলেট টেস্টে রান না পেলেও ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইমরুল কায়েস ও লিটন দাসকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই নেই। তামিমের ইকবালের অনুপস্থিতিতে ইমরুল-লিটনই এখন সম্ভাব্য সেরা ওপেনিং জুটি।
সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে খুঁজে না পেলেও মুমিনুলও তিন নাম্বারে বেস্ট চয়েজ। এই তিনজনের জায়গা নেয়ার অবস্থা এখনও শান্তর হয়নি। ওদিকে চার পাঁচে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর চেয়ে ভালো আর কেউ নেই এখন। শান্তকে চারে খেলাতে গিয়েই ঘটেছে বিপত্তি। সিলেট টেস্টে ছয় নাম্বারে চলে গিয়েছিলেন মুশফিক। সেটাও দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে।
ওদিকে, শান্ত রানও করতে পারেননি (দুই ইনিংসে ৫ আর ১৩)। তাই সব বিচার বিশ্লেষণে এমন একজনকে খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে, যিনি মিডল অর্ডার পজিশনে অভ্যস্ত। সেটা মোহাম্মদ মিঠুন। তাই শান্তর জায়গায় ঢাকা টেস্টে মিঠুনের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।
এআরবি/এমএমআর/পিআর