ধর্ম

কেয়ামতের দিন নবি-রাসুলরাও কি ভীত থাকবেন?

মুক্তির জন্য শিরকমুক্ত ঈমান এবং নেক আমলের বিকল্প নেই। হাশরের ময়দানে শুধু মানুষই নয় বরং প্রত্যেক নবি-রাসুলও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকবে। কেউ জানেন না সে দিন আল্লাহ তাআলা কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবেন।

Advertisement

যদিও হাদিসে এসেছে, হাশরের দিন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেজদা থেকে মাথা ওঠাতে বলবেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। অতঃপর তিনি বিচারকার্য শুরু করার সুপারিশ করবেন। আর সেই সঙ্গে মানুষের বিচারকার্য শুরু হবে।

সে (হাশরের) দিন যার আমলনামা ভালো হবে সে হবে সফল। হাশরের ময়দানে নবি-রাসুলরা কতটা ভয়াবহ সময় কাটাবে তা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস থেকেই সুস্পষ্ট।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাজিল হয়-وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ(হে রাসুল!) আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করুন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৪)তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন-> হে কুরাইশ দল! (তোমরা আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতের ধারায়) নিজেদের আত্মাকে প্রস্তুত কর। আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো কাজে আসতে পারব না।> হে বনি আবদে মানাফ! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না।> হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র আব্বাস! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো উপকার করতে পারব না।> হে রাসুলের ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর কাছে আপনার কোনো কাজে আসব না।> হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কন্যা ফাতেমা! তুমি আমার সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোনো কাজে আসব না।’ (বুখারি)

Advertisement

আরও পড়ুন > পরকালে শাফায়াতের একচ্ছত্র মালিক কে?

সতর্কবার্তা ঘোষণা করার পরেই আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে প্রিয়নবিকে এ কথাগুলোও ঘোষণা করার নির্দেশ দেন-‘আর মুমিনদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করে, তাদের প্রতি তোমার বাহুকে অবনত কর। তারপর যদি তারা তোমার অবাধ্য হয়, তাহলে বল, তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আর তুমি মহাপরাক্রমশালী পরম দয়ালু (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর। যিনি তোমাকে দেখেন যখন তুমি (নামাজে) দণ্ডায়মান হও এবং সেজদাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ২১৫-২২০)

আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদতে যদি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজ বংশধর, চাচা, ফুফু ও কন্যার ব্যাপারে এমন ঘোষণা দেন তবে অন্যান্য মুসলমান কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করে প্রিয়নবির শাফায়াত লাভের আশা করতে পারে।

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে মানুষ যখন শিরকমুক্ত ঈমান ও ইবাদতে একনিষ্ঠ থাকবে। তার মুক্তি সহজ ও নিরাপদ হবে। পরকালে যে সব জিনিসের শাফায়াতের কথা ঘোষণা করা হয়েছে তাও লাভ হতে পারে।

Advertisement

শিরকমুক্ত ঈমান ও নেক আমল-ইবাদত ছাড়া প্রিয়নবির উম্মতের দোহাই দিয়ে পরকালে পার হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যেখানে সব নবি-রাসুলরাও নাফসি নাফসি করবে।

সুতরাং কুরআনের ঘোষণা, জাহান্নামের আগুন থেকে তুমি নিজে বেঁচে থাক এবং তোমার পরিবার পরিজনকে বাঁচাও।’- এ নির্দেশের ওপর আমল করা জরুরি।

প্রিয়নবির প্রতি উম্মতের শিক্ষার জন্য যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক কর।’ সে আলোকে কুরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করা জরুরি। তবেই সম্ভব পরকালের সফলতা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ ও তার ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। হাশরের ময়দানে হাদিসে ঘোষিত সব ধরনের শাফায়াত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর