আইন-আদালত

ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষার নির্দেশ

রাজধানী ঢাকা মহানগরীর ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কি না-তা পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, আগামী দুই মাসের মধ্যে পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

এ ছাড়া ওয়াসার নিরাপদ পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রশাসন, স্বাস্থ্য সচিব, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ-সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যার্টনি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন সাজু।

Advertisement

আদেশের পর আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘নগরাঞ্চলে পাইপলাইনে সরবরাহ করা ৮২ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

রিটকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, পাইপের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গঠিত কমিটিতে স্থানীয় সরকার প্রশাসন, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) প্রতিনিধি থাকবেন।

তানভীর বলেন, ‘আদেশে আদালত আপাতত ঢাকা ওয়াসার পানির পানির মান পরীক্ষা করতে বলেছেন। পরবর্তীতে হয়তো দেশের সব অঞ্চলের পানির মানও পরীক্ষা করতে বলবেন।’

তিনি জানান, বিবাদীদের নিরাপদ পানি সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের কারও কাছ থেকেই কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পরে এই রিট আবেদন করা হয়।

Advertisement

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন দেয়। গত ১১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

পানি, পয়োনিষ্কাশন, পরিচ্ছন্নতা এবং দারিদ্র্যের মধ্যে সংযোগ খুঁজে বের করতে বিশ্বের ১৮টি দেশে বৈশ্বিক গবেষণা করে বিশ্বব্যাংক। তার ভিত্তিতে ওই ১৮টি দেশের প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পানির নিরাপদ উৎসগুলোর ৪১ শতাংশই ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং ১৩ শতাংশে রয়েছে আর্সেনিক।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই। ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে পাওয়া গেছে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়।

নিম্নমানের পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা দেশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এ দুটি বিষয় শিশুর পুষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম। নিরাপদ ও মানসম্মত পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনের মতে, দেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় কম। গত এক দশকে এই খাতে বাজেটে বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক কমেছে।

এফএইচ/আরএস/এসআর/এমএস/জেআইএম